Home » আমার মেয়ে কখনো রান্নাবান্না করেনি, আমার খুব আদরের মেয়েতো…
নিবন্ধ

আমার মেয়ে কখনো রান্নাবান্না করেনি, আমার খুব আদরের মেয়েতো…

রান্নাঘর পরিষ্কার

আমার মেয়ে কখনো রান্নাবান্না করেনি, আমাদের খুব আদরের মেয়েতো বা আমাদের মেয়েকে আমরা খুব আদর করে মানুষ করেছি, কখনো রান্নাঘরে যেতে দেইনি । যদিও আমাদের দেশে এরকম খুব কমই শোনা যায় তবে বর্তমান সময়ে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । তাই বর্তমানে প্রায়ই এই বিষয়টাও আলোচনায় চলে আসছে ।

আমার মতে এধরনের কথা কখনো কাম্য নয় । সব সন্তানই বাবা মায়ের আদরের । তাহলে যারা তাদের মেয়েকে রান্না করা বা গৃহস্থালীর কাজ গুলো শিখিয়েছেন তারা কি তাদের সন্তানকে আদর করেন না ?

আসলে তারাই তাদের সন্তানকে বেশি ভালোবাসেন । তাই তারা তাদের সন্তানকে বসিয়ে না রেখে সংসারের ছোটখাটো কাজগুলো শিখিয়েছেন । একটা কাজ না পারাতে কোন গৌরব নেই বরং করতে পারলেই গৌরব । বিয়ের পর অনেকসময় এই সামান্য বিষয়গুলো নিয়েও ঝামেলা হয় ।

এই বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা হচ্ছিলো । তখন একটা বিষয় লক্ষ্য করে দেখলাম, সব মেয়েই ঘুরে ফিরে একটা কথাই বলছে, তা হলো “বিয়ে করতে হলে রান্না জানতে হবে কেন ? বিয়ে করে ঘরে বউ আনবেন, চাকরানী নয়” !

তারা কি বুঝে এমন মন্তব্য করলেন তা আমার মাথায় ঢুকলোনা । সংসারের একটা কাজ জানা থাকতে হবে এমন আশা করাতে তারা এত রাগান্বিত হয়ে গেলো কেন তা আমি বুঝলাম না । আর বাড়িতে রান্না করে খাওয়ালে তারা কোন দিক দিয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে সেটার কোন ব্যাখ্যাও তারা দিতে পারেনা অথচ এরাই আবার মাঝে মধ্যে জ্ঞান দিয়ে থাকে যে, “কোন কাজই ছোট নয়” । তাদের কথায় বুঝা যায়, তাদের মা-খালা বা দাদি-নানি চাকরানী ছিলো । তাদের মা-খালারা হয়তো পড়ালেখা করেনি বা কম পড়ালেখা করেছে আর তারা হয়তো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছে । এছাড়া আর কোনো বিশেষ পার্থক্য নেই । এই সামান্য পার্থক্যের জন্য তারা তাদের মা-খালাকে বা যেসব মেয়েরা রান্না করে স্বামী সন্তানকে খাওয়ায় তাদেরকে চাকরানী বানিয়ে দিলো ! এছাড়া বর্তমানে বিয়ের পর অনেক মেয়েই আলাদা সংসার করতে চায় । সেক্ষত্রেতো এইসব কাজ জানা আরো জরুরী হয়ে পরে ।

আদরের মেয়ে বলে যদি কোন মেয়ে রান্না করা বা জামা কাপড় ধোয়া বা ঘর মোছা না জানে তাহলে আদরের ছেলে বলে কোন ছেলে যদি চাকরি বা ব্যবসা বানিজ্য বা বাজার সদাই করা বা পরিবারের যে সব কাজগুলো সাধারনত ছেলেরা করে থাকে সেগুলো করতে না পারে তাহলে কি মেয়েরা তাকে স্বামী হিসেবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিবে ?

আবার কোনো কোনো মেয়েকে দেখলাম কথার কোনো যথাযথ উত্তর দিতে না পারলেও চুপ করে থেকে হার মানার পাত্র নয় ! তাই তারা বললো বউকেই রাধতে হবে কেন ? স্বামি রান্না করে খাওয়াক, সমস্যা কি ?

আসলে তেমন কোনো সমস্যা নেই । তবে মেয়েদের কাজগুলো ( “মেয়েদের কাজ” বলছি কারন আবহমান কাল ধরে মেয়েরা এই কাজ গুলো করে আসছে তাই । এগুলোযে শুধু মেয়েদেরই করতে হবে এমন কোনো কথা নেই) যদি ছেলেরা করে দেয় তাহলে ছেলেদের কাজ, যেমন- বাজার সদাই করা, ব্যবসা বানিজ্য সামলানো, পারিবারিক বিভিন্ন কাজ, বাসা পাল্টানোরর সময় ঘরের ভারী বস্তুগুলো বহন করা, চাউলের বস্তা টানা বা হুট করে টয়লেটের পাইপ জ্যাম হয়ে গেলে সেটা ঠিক করা বা রাস্তায় ঘুরে স্যানিটারি মিস্ত্রি খোজার কাজ গুলো মেয়েদের করতে হবে । সেগুলো কি তারা করবে ?

আসলে উদাহারন দিতে গিয়ে বা কথার পিঠে কথা বলতে গিয়ে কথাগুলো হয়তো এনেকটা ছেলেদের পক্ষে চলে যাচ্ছে কিন্তু তার মানে এই নয় যে ছেলেদের ভালো বানানোর জন্য এই নিবন্ধ লেখা হয়েছে । আসলে ছেলে বা মেয়ে যেই হোক না কেন জীবন চলার পথে নিত্যপ্রয়োজনিয় কাজ গুলো আমাদের সবারই জানা থাকা উচিত ।

কোনো মেয়ে যদি বলে আমি রান্না করতে পারিনা বা ঘর পরিস্কার করতে পারিনা তাহলে তাকে আমি যেমন অপদার্থ এবং অযোগ্য মনে করবো তেমনি কোনো ছেলেও যদি বাজার সদাই ( পকেটে কিছু টাকা ভরে বাজারে গিয়ে, ৩০ টাকার সবজি ৩৫ টাকা আর বাসি পচা মাছ কিনে ফিরে আসার নামই বাজার নয় বরং দেখে শুনে যাচাই করে ভালো জিনিস যথাসম্ভব ন্যায্য দামে কিনতে পারাটাই হলো বাজার । যা শুনতে সহজ মনে হলেও বাস্তবে সহজ নয়) বা পরিবারের কাজগুলো করতে না পরে তাহলে তাকে আমি অপদার্থ বা অকর্মন্যই বলবো । আর অকর্মন্য বা অপদার্থ হওয়ার চাইতে কামলা বা চাকরানী হওয়া হাজারগুন ভালো ।

আর বিয়ের পর শ্বশুড় বাড়িতে রান্না করে খাওয়ানোর জন্যই যে রান্না পারতে হবে এমন মনোভাব থাকা উচিত নয় বরং বিয়ের আগেও বাসাতে মাঝেমধ্যে রান্না করে সবাইকে খাওয়াতে বা কোন সময় যদি মা অসুস্থ থাকে তাহলে মাকে সাহায্য করতেও এসব জানা দরকার তেমনি ছেলেদেরও বাবাকে বা বড় ভাইকে সাহায্য করার মতো সব কাজ সামাল দেয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে । নিজের কাজ করার পরেও ছেলে-মেয়ে একে অপরকে সাহায্য করার মাধ্যমেই ভালো একটি সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব ।

কাজ না পেরে বসে থাকা বা একজনের কাজ অন্যজনের উপর চাপিয়ে দেয়ার মধ্যে কোনো গৌরব নেই । মনে রাখা দরকার কাজের মেয়ে বা কাজের ছেলে দিয়ে সবসময় সব হয়না । বর্তমানে অনেক মেয়েই চাকরি বা ব্যবসা (ইদানিং অনেকেই মনে করে যে, চাকরি বা ব্যবসা করলেই বুঝি নারী জাতি এগিয়ে যাবে তবে আমার মনে হয় চাকরি বা ব্যবসা করতে পারলেই যে নারীরা এগিয়ে যাবে এমন কোনো কথা নেই বরং নারীরা কতটা সুখী, সুন্দর ও নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারছে সেটাই আসল কথা । যাই হোক সেটা অন্য বিষয়) করার পরও সংসারের কাজ করছে আবার অন্যদিকে ছেলেরাও ব্যবসা বানিজ্যের পাশাপাশি বাসায় স্ত্রীকে রান্নার কাজে সাহায্য করছে বা জামাকাপড় গুলো নিজেই ধুয়ে ফেলছে । আসলে এরাই প্রকৃত যোগ্য মানুষ ।

এই সপ্তাহের সর্বাধিক দেখা ভিডিও:

বাংলাদেশীদের জন্য সেরা অ্যাপ

BD MEDIA MATE APP SCREENSHOT

আমাদের ওয়েবসাইটের জনপ্রিয় পোস্টগুলি:

BEST APP FOR US PEOPLE

US MEDIA MATE APP
Don`t copy text!