খাবারের অপচয় এবং অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে খাবার কেনা বন্ধ করুন ।
মানুষ প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০ কোটি টন খাবার অপচয় করে!!!
ইসলাম ধর্ম মতে অপচয়কারী শয়তানের ভাই ! যে কোন কিছুই অপচয়ই অনুচিত । আর খাবারের মতো একটি অতি গুরুত্বপূর্ন জিনিসের অপচয়তো কোনভাবেই কাম্য নয় । হয়তো আপনি ধনী, হয়তো আপনার কোন অভাব নেই, হয়তো আপনার কাছে পর্যাপ্ত খাবার আছে তাই কিছু খাবার নষ্ট করলেই আপনার কিছুই হবেনা । তারপরও কেন আপনার কষ্ট করে হলেও খাবারের অপচয় রোধ করতে চেষ্টা করা উচিত সেটা বুঝতে হলে কিছু বিষয় জানা দরকার ।
* আপনি কি জানেন ?
বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৮০ কোটি মানুষ অপুস্টিতে ভুগছে বা প্রতিদিন ৩ বেলা পর্যাপ্ত খাবার পায় না।
* আপনি কি জানেন ?
এবছরও খাদ্যের অভাবে প্রায় ১ কোটি লোক মারা যাবে। শুধু এবছর নয় বরং প্রতি বছরই কোটির কাছাকাছি মানুষ খাদ্যের অভাবে মারা যায় ।
* আপনি কি জানেন ?
গতকালও পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে এবং পুষ্টিকর খাবারের অভাবে ১৫ থেকে ২০ হাজার লোক মারা গেছে এই বিশ্বে এবং আজকেও যখন আপনি এই লেখাটা পড়ছেন ঠিক সেই মূহুর্তেই সিরিয়া, ইয়েমেন, কঙ্গো, ইথোয়পিয়া, মাদাগাস্কার, সুদান, হাইতি, সোমালিয়া সহ বিভিন্ন দেশে কেউ না কেউ খাবারের অভাবে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো !!!
আমাদের দেশেও খুজলে হয়তো এমন ঘটনা পাওয়া যাবে । সারা দেশ খোজার দরকার নেই, শুধু আপনার গ্রামেই খুজে দেখুন । হয়তো পেয়ে যাবেন এমন কোন শিশুকে যে পেট ভরে খেতে পায়নি !
*** আর এই অবস্থার মাঝেও আমরা অনেকেই খাবারের অপচয় করি !
যে কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলেই দেখতে পাবেন ৯০% লোক তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার প্লেটে তুলে নেয় এবং শেষ পর্যন্ত সেগুলো সব না খেয়ে নষ্ট করে । কেউ কেউতো ইচ্ছে করেই প্লেটে কিছু খাবার ফেলে রেখে হাত ধুয়ে ফেলে!!! কয়েকজনের কাছে শুনেছি এটা নাকি একধরনের ভদ্রতা ! চেটেপুটে খেলে নাকি লোকে গরীব, ছোটলোক ভাববে !!! তাই তারা প্লেটের সব খাবার না খেয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খাবার নষ্ট করে বড়লোকি দেখায় !!! ভাবখানা এমন যে, এইসব পোলাও মাংস আমার কাছে কোন ব্যাপারই না । আমি রোজ ৬ বেলা এসব খাবার খাই ! কতটা বিকৃত হতে পারে মানুষের মানসিকতা ! আরেকজনের টাকায় আয়োজন করা অনুষ্ঠানের খাবার নষ্ট করে আমরা বড়লোক সাজতে চাই !
এতে এক দিকে যেমন আল্লাহর দেয়া গুরুত্বপূর্ন নেয়ামতকে (খাবার) অবহেলা করা হয় আবার অন্যদিকে অনুষ্ঠান আয়োজনকারীদের উপর খরচের বাড়তি বোঝা চেপে বসে ।
আমার ধারনা বাংলাদেশে প্রতি সপ্তাহে শুধু বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে যে পরিমান খাবার অপচয় হয় তা দিয়ে অন্তত ৫০ হাজার মানুষের তিন বেলা খাবার হয়ে যাবে ।
আমি সাধারনত বিয়েতে গেলে চেষ্টা করি আমার প্লেটে যেন একটি ভাতও অপচয় না হয় । বাড়িতেও এভাবেই খাই । প্রথমত চেষ্টা করি পরিমানমতো রান্না করতে এবং দ্বীতিয়ত চেষ্টা করি ভাতের একটি চালও যেন নষ্ট না হয় । লাউ কিনলে লাউয়ের খোসাও ফেলে না দিয়ে ভাজি করে খাই । ফুলকপি কিনলে সেটারও শুধু ফুল নয়, সাথে পাতা এবং ডাটিগুলোও খাই ।
এগুলোর প্রতিটিই খাওয়ার যোগ্য, স্বাস্থ্য সম্মত এবং পুষ্টিকর । তাহলে কেন এগুলো ফেলে দিবো ?
ভেবে দেখুন, আমি যদি দুই থেকে তিনদিন লাউয়ের খোসা ভাজি করে খাই তাহলে সেগুলো দিয়ে আরেকটি লাউয়ের সমান সবজি হয়ে যাচ্ছে । এতে আমার অন্তত একদিনের সবজি বেচে যাচ্ছে । আমার সেই বেচে যাওয়া সবজিটি আরেকজন মানুষ কিছুটা কম দামে কিনে খেতে পারছে ।
সারা দেশে যদি কয়েক লাখ লোক আমার মতো এভাবে খায় তাহলে কতখানি সবজি প্রতিদিন বেচে যাবে চিন্তা করে দেখেছেন ? তখন চাহিদা কমলে দামও স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে ফলে অনেক গরীব মানুষ কিছুটা কম দামে খেতে পারবে আর আমরা নিজেরাও কম দামে খেতে পারবো ।
আসলে আমি মহত্ব দেখানোর জন্য লাউয়ের খোসা বা ফুলকপির পাতা, ডাটি এসব খাইনা বরং এতে করে আমার অনেকখানি টাকাও বেচে যায় ।
এবার আরেকটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই । সেটি হলো “অতিরিক্ত দাম দিয়ে পন্য ক্রয় “।
অতিরিক্ত দাম দিয়ে যে কোন কিছু ক্রয় করাই অর্থনৈতিক ভারসাম্যের জন্য ক্ষতিকর । তবে এখানে যেহেতু আমি খাবারের বিষয়ে কথা বলছি তাই খাবারের অতিরিক্ত দামের কথাই বলবো ।
ধরুন একটি সবজির দাম ২০ টাকা হওয়া উচিত কিন্তু বিক্রেতা অতিরিক্ত লাভের আশায় সেটি ২৫ টাকায় বিক্রি করতে চাইছে । আপনার কাছে টাকা আছে বলে আপনি যেই সবজিটির দাম ২০ টাকা হওয়া উচিত সেটি যদি ২৫ টাকা দিয়ে কিনে ফেলেন তাহলে বিক্রেতা দাম বাড়াতে আরো উৎসাহ পেয়ে যাবে আর ভাববে ৫টাকা বেশি রাখার পরও যেহেতু আমার পন্য বিক্রি হচ্ছে তাহলে আর দাম কম রাখতে যাবো কেন ? তখন সে দাম বাড়িয়েই বিক্রির চেষ্টা করবে । কিন্তু দাম বাড়ানোর ফলে যদি কেউ তার পন্যটি না কিনে বা বিক্রির জন্য অনেক কষ্ট করতে হয় তাহলে পরবর্তীতে বিক্রেতা কম দামে পন্য বিক্রি করবে । তখন আপনি নিজেও কম দামে কিনতে পারবেন আর অন্যরাও কম দামে কিনতে পারবে ।
তাই আসুন ক্ষুধা মুক্ত দেশ ও পৃথীবি গড়তে খাবারের অপচয় ও অতিরিক্ত দাম দিয়ে খাবার কেনা বন্ধ করি ।