জিমেইল এবং ইয়াহু মেইল হচ্ছে পৃথীবির সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় ইমেইল সেবা। জিমেইল হচ্ছে জনপ্রিয় সার্চ ইন্জিন গুগলের ইমেইল সেবা আর ইয়াহু মেইল হচ্ছে বিখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের উদ্ভাবিত ইমেইল সেবা। তবে বর্তমানে ইয়াহু ইমেইল মার্কিন মোবাইল অপারেটর ভেরিজেনের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে এবং তাদের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
বর্তমানে এই দুইটি প্রতিষ্ঠানের ইমেইল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে কোনটি ভালো বা কোনটি সেরা? এখানে আমরা আলোচনা করবো কোনটি সেরা তা নিয়ে। জিমেইল নাকি ইয়াহু মেইল ? দুইটি প্রতিষ্ঠানেরই কিছু ভিন্নতা, প্রযুক্তিগত পার্থক্য এবং সুবিধা- অসুবিধা রয়েছে। চলুন তাহলে দেখে নেই কোনটির কি অবস্থা ?
জিমেইল ও ইয়াহু মেইলের সুবিধা-অসুবিধা:
পাতার ধরন: জিমেইলের পেজ লে আউটের ধরন হলো, এর প্রতিটি ইমেইলের রো গুলো কিছুটা প্রশস্ত। লেখাগুলো বড় আকারের। ফলে সহজেই দৃষ্টি আর্কষন হয় এবং পড়তে সুবিধা হয়। ইয়াহু মেইলের রো গুলো চিকন এবং লেখাগুলো ছোট আকারের। ফলে সহজে দৃষ্টি আর্কষন হয়না এবং পড়তে কিছুটা সমস্যা হয়।
নিরাপত্তা: দুইটি প্রতিষ্ঠানই পৃথীবির শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান তাই তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতাও খুবই উচুমানের। কিন্তু তবুও অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ২০১৩ সালে একজন হ্যাকার ইয়াহু মেইল হ্যাক করে প্রায় ৩০০ কোটি একাউন্টের গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়! যা পৃথীবির সবচেয়ে বড় হ্যাকিংয়ের ঘটনাগুলোর মাঝে অন্যতম। অবশ্য পরবর্তিতে ইয়াহু কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। তবে জিমেইল এর ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত এত বড় মাপের বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেনি।
ইয়াহু মেইলে পাঠানো প্রতিটি ইমেইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাইরাস স্ক্যান করা হয়। যা ক্ষতিকর বিভিন্ন ভাইরাস থেকে গ্রাহকদের রক্ষা করে। জিমেইল কর্তৃপক্ষও তাদের ইমেইলগুলোতে ভাইরাস স্ক্যান করে থাকে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার তাদের ভাইরাস স্ক্যান সেবাটি বন্ধ পেয়েছি কারিগরি ত্রুটির কারনে। সে সময় জিমেইল কর্তৃপক্ষ তাদের ইমেইল থেকে বিভিন্ন ফাইল ওপেন করা বা ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুকির দায় দায়িত্ব গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে যা আমার দৃষ্টিতে খারাপ লেগেছে।
স্টোরেজ: জিমেইল কর্তৃপক্ষ তাদের ইমেইল সেবার জন্য ১৫ জিবি পর্যন্ত ফাইল স্টোরেজ সুবিধা প্রদান করে থাকে যা যেকোন সাধারন মানুষের জন্য যথেষ্ট। তবে এক্ষেত্রে ইয়াহু মেইল রীতিমত চমকে দেবার মতো সুবিধা প্রদান করে থাকে। তারা গ্রাহকদের ১০০০ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ সুবিধা প্রদান করে থাকে! যা জিমেইলের তুলনায় প্রায় ৬৭ গুন বেশি!!! যারা প্রতিদিন প্রচুর ইমেইল করে থাকেন বা ইমেইলের মাধ্যমে বড় বড় ফাইল পাঠিয়ে থাকেন তাদের জন্য এটি খুবই সুবিধাজনক।
ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা: জিমেইল কর্তৃপক্ষ তাদের নীতিমালা অনুযায়ি তাদের সাথে যুক্ত বিভিন্ন ৩য় পক্ষের নিকট আপনার তথ্য সরবরাহ করার অধিকার রাখে, যা আপনার ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য হুমকি স্বরুপ।
ইয়াহু মেইল কর্তৃপক্ষ ৩য় পক্ষের সাথে আপনার তথ্য ভাগ করেনা। ফলে আপনার গোপনীয়তা সুরক্ষিত থাকে। তবে যদি ২০১৩ সালে ঘটে যাওয়া হ্যাকিং বিপর্যয়ের মতো কোন ঘটনা ঘটে তাহলে শুধু ৩য় পক্ষ নয় বরং কত পক্ষের কাছে আপনার তথ্য চলে যাবে তার নিশ্চয়তা কে দিবে ?
স্প্যাম ইমেইল: জিমেইল তাদের ধারনা অনুযায়ি বিভিন্ন বিরক্তিকর ও কম গুরুত্বপূর্ন ইমেইলগুলোকে স্প্যাপ হিসেবে গন্য করে গ্রাহকদের কাছে গুরুত্বপূর্ন ইলেইলগুলো তুলে ধরে যা একটি ভালো দিক।
ইয়াহু মেইলও স্প্যাম ইমেইল থেকে গ্রাহকদের মুক্ত রাখার চেষ্টা করে তবে এটি জিমেইলের মতো অতটা সফলভাবে তা করতে পারেনা। এখানে তারা জিমেইলের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির প্রোমশন অফার, বিজ্ঞাপনের মাঝে দরকারি ইমেইলটি খুজে পেতে কিছুটা কষ্ট হতে পারে।
পেজ ব্রেক: জিমেইলে প্রতি পাতায় ৫০টি করে ইমেইল প্রদর্শিত হয়। আপনার কাছে আসা সর্বশেষ ৫০টি ইমেইল এটি আপনার সামনে তুলে ধরবে। এর আগের পাঠানো ইমেইল বা পুরাতন ইমেইলগুলো দেখতে হলে আপনাকে পরের পাতায় যেতে হবে।
ইয়াহু মেইলে আপনাকে পুরাতন ইমেইল দেখতে হলে পাতা পরিবর্তন করতে হবেনা। আপনি নীচের দিকে স্ক্রল করে নামতে থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগের ইমেইলগুলো লোড হয়ে প্রদর্শিত হবে। ফলে পুরাতন ইমেইল খোজার বেলায় এটি আপনার সময় বাচাবে এবং বিরক্তি কমাবে।
জিমেইল এবং ইয়াহু মেইল সম্পর্কে সাধারন বিষয়গুলো তো জানলেন। এবার নিজেই সিদ্ধান্ত নিন আপনার জন্য কোনটি প্রয়োজন। কারন প্রত্যেকের চাহিদা ভিন্ন হতে পারে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ইয়াহু মেইল বেশি পছন্দ করি এর পেজ ব্রেক সিস্টেম এবং ১০০০ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ সুবিধার জন্য। তাছাড়া ইয়াহু মেইল আমার জীবনের প্রথম ইমেইল একাউন্ট। তাই এর প্রতি আমার কিছুটা বাড়তি ভালোবাসা রয়েছে। তবে আপনি আপনার সুবিধা অনুযায়ি বাছাই করুন কোনটি ব্যবহারর করবেন।
Add Comment