Home » বিয়ের আগে করণীয় : হবু স্বামি-স্ত্রীর যেসব বিষয়ে অবশ্যই কথা বলে নেয়া উচিত
নিবন্ধ

বিয়ের আগে করণীয় : হবু স্বামি-স্ত্রীর যেসব বিষয়ে অবশ্যই কথা বলে নেয়া উচিত

বিয়ের আগে করণীয় কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজটি হলো হবু স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়ে আলোচনা করে নেয়া, জেনে নেয়া, বুঝে নেয়া। বিয়ের আগে সবাই কেনাকাটা, সাজগোজ, আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন পরিকল্পনা করে সময় পার করে থাকেন তবে সবচেয়ে জরুরী কাজটি অনেকেই করেননা। আর সেটা হলো হবু বর ও কনের নিজেদের মধ্য খোলামেলা আলোচনা। বেশ কিছু বিষয়ে হবু স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে কথা বলে পরিষ্কার হয়ে নেয়াটা খুবই জরুরী। চলুন তাহলে দেখে নেই বিয়ের আগে হবু স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে কোন কোন বিষয়গুলো কথা বলে নেয়া দরকার।

বিয়ের আগে করণীয় – আলোচনা হতে পারে যেসব বিষয়ে

জেনে নিন সে আপনাকে বিয়ে করতে আসলেই রাজি কিনা- যার সাথে আপনার বিয়ের কথাবার্তা চলছে সে আপনার সাথে বিয়েতে আসলেই রাজি কিনা তা জানতে চান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সবাই রাজি থাকার কথাই বলবে। তবুও উত্তরটা তার কাছ থেকেই শুনুন। আপনার হবু স্বামী বা স্ত্রী কি শুধুই পরিবারের মতে আপনাকে বিয়ে করছে নাকি তার নিজেরও মত আছে তা জানুন।
আর উত্তর যদি নেতিবাচক হয় তাহলে চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিন।

ব্যাক্তিগত অতীত- ব্যক্তিগত অতীত বলতে আমি বোঝাতে চাইছি অতীত সম্পর্কের কথা। কারো সাথে প্রেম-ভালোবাসায় জড়িয়েছিলেন কিনা সে কথা । সবাই কি বলবে জানিনা, তবে আমি এখানে কিছুটা তথ্য গোপন করাটাই ভালো বলে মনে করি ।

সবাই হয়তো বিয়ের আগে কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন কিনা তা জানাতে বলবে, তবে আমার মতে এধরনের কথা না জানানোই ভালো। অনেক সময় দেখা যায় হয়তো কাউকে আমরা মনে মনে পছন্দ করি, কিন্তু এ বিষয়টা কেউ জানেনা । তাহলে মনের কথা মনেই রেখে দিন। যেটা কেউ জানেনা সেটা আর নতুন করে কাউকে জানানোর দরকার নেই। তবে যদি এমন হয় যে আপনার সম্পর্কের কথা অনেকেই জানে বা ভবিষ্যৎতে জানাজানি হতে পারে, আপনি না বললেও আপনার হবু স্বামী বা স্ত্রী একসময় বিষয়টি জানতে পারবে, তাহলে অন্যের কাছ থেকে শোনার আগে আপনি নিজে বলে দিলেই ভালো হবে। হয়তো হবু স্বামী বা স্ত্রী এতে মনে কষ্ট পাবে কিন্তু আপনার উপর আস্থাও কিছুটা বাড়বে। আর যদি আপনার কাছ থেকে শোনার আগে অন্য কারো কাছ থেকে শোনে তাহলে সে ভাববে আপনি তাকে ধোকা দিচ্ছেন, হয়তো আরো অনেক কিছুই লুকিয়েছেন।

মূল কথা হলো, যেটা প্রকাশিত হবেই বা হয়ে যেতে পারে সেটা লুকানোর চেষ্টা না করাই ভালো । এতে ভবিষ্যৎতে অবিশ্বাস ও ক্ষোভ বাড়বে। আর যেটা কেউ জানেনা, যেটা গোপনে মাটির নিচে চাপা পরে আছে সেটা খুড়ে বের করার দরকার নেই।

তবে যদি এমন হয় যে আপনি আগে আবেগের বশে বা অন্য যেভাবেই হোকনা কেন, কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তবে সেই সম্পর্ক এখন আর নেই এবং আপনি আপনার হবু স্বামী বা স্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়ে রাখতে চান তাহলে আগে সিদ্ধান্ত নিন যে আপনি কি আসলেই অতীতকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে নতুন ভাবে সব শুরু করতে পারবেন কিনা ? যদি পারেন তবে আপনার হবু স্বামী বা স্ত্রীর কাছে ওয়াদা করে বলুন যে আপনি আগে যা করেছেন ভুল করেছেন এবং ভবিষ্যৎতে আর কখনো পুরানো প্রেমিক/প্রেমিকার কথা মাথায় ঢুকাবেন না ও সাবেক প্রেমিক প্রেমিকার কাছ থেকে ১০০% দুরত্ব বজায় রাখবেন।

তবে পুরানো প্রেমিক প্রেমিকার কথা জানার পর আপনার হবু স্বামী বা স্ত্রী বিষয়টি মেনে নিতে পারবে কিনা তা বলা যায়না। তবে যদি সে পুরানো প্রেমিক প্রেমিকার কথা জানার পরও আপনার উপর বিশ্বাস রেখে সে বিষয়টি মেনে নেয় তাহলে সারাজীবন সেই বিশ্বাস রক্ষা করে চলুন। নিজেকে অতীত থেকে সম্পূর্ন দূরে সরিয়ে ফেলুন।

আর যদি আপনি এখনও মনে মনে আপনার পুরানো প্রেমিক প্রেমিকাকে ভালোবাসেন এবং তাদের ভূলতে না পারেন তাহলে আমি বলবো আপনার বিয়ে করা উচিত হবেনা। কারন এমন হলে আপনার জীবনও নষ্ট হবে সাথে আপনার হবু স্বামী বা স্ত্রীর জীবনটিও নষ্ট হবে।

শারীরিক সমস্যা– আপনার কোন শারীরির সমস্যা বা অসুস্থতা থাকলে সে বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলে রাখা জরুরী। আমাদের দেশে অনেকেই এই বিষয়গুলো লুকিয়ে রাখে। কিন্তু বিয়ে হয়ে গেলে কিছুদিন পর এটা প্রকাশ পাবেই। তখন এগুলো নিয়ে ক্ষোভ ও তিক্থা সৃষ্টি হতে পারে। তাই বিষয়গুলো আগেই পরিষ্কার করে নেয়া উচিত। তথ্য লুকিয়ে যেন-তেন ভাবে বিয়ে করাই আমাদের লক্ষ্য নয় বরং বিয়ে করে সুখী জীবন যাপন করাই আমাদের লক্ষ্য। তাই বিয়ের পর তিক্ততা ও বিরক্তি এড়াতে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আগেই কথা বলে নেয়া উচিত।

দেনমোহর- আমাদের দেশে দেনমোহরের বিষয়টি সাধারনত পরিবারের অভিভাবকরাই নির্ধারন করে থাকেন তবে। তবে এবিষয়ে কারো কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন।

পরিবার সম্পর্কে- বিয়ের আগেই একে অপরের পরিবার সম্পর্কে জানুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন। পরিবার বলতে বাবা- মা এবং ভাই-বোনের বিষয়ে জেনে রাখা সবচেয়ে জরুরী। আপনার বাবা-মা হবু স্বামী/স্ত্রীর কাছ থেকে কি চায় আর আপনার হবু শশুড় শাশুড়ি আপনার কাছ থেকে কি চায় সে বিষয়ে কথা বলুন, তাদের আচরন ও মানসিকতা সম্পর্কে নিজে জানুন এবং হবু স্বামি বা স্ত্রীকেও জানিয়ে রাখুন যেন সে এই বিষয়গুলোতে আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে এবং নিজেকে সেভাবে গড়ে তোলো।

তবে এখানে একটা বিষয় লক্ষনীয় যে অতিরিক্ত কিছু আশা করা ঠিক নয়। ছেলের পরিবার যেন হবু ছেলের বউয়ের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু আশা না করে আবার মেয়ের পরিবারও যেন মেয়ের হবু জামাইয়ের কাছ থেকে অতিরিক্ত আশা না করে ।

এখানে ছেলেদের জন্য আমার মতামত হলো, আপনার স্ত্রী আপনার বাবা মায়ের খুব সেবা করবে এমনটা বর্তমান সময়ে জোড়ালো ভাবে আশা করা যায়না। কারন আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ অনেকটাই কমে গেছে। তাই বাবা-মায়ের সেবার জন্য বউকে না পাঠিয়ে নিজেই বাবা-মায়ের সেবা করুন। যখন আপনার স্ত্রী দেখবে আপনি আপনার বাবা-মাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন, তখন সেও তাদের গুরুত্ব বুঝতে পারবে।

আর মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলবো, একটু কষ্ট হলেও সমাজের ভালো রীতিগুলো টিকিয়ে রাখুন। আপনি আপনার শশুড় শাশুরির সেবা করলে আরেকজন আপনার বাবা মায়ের সেবা করবে, ভবিষ্যৎতে আপনারও সেবা করবে।

পেশা সম্পর্কে- আপনি বর্তমানে কোন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন, সেখানে আপনার দায়িত্ব কি, সেখানে আপনাকে কতখানি সময় দিতে হয় বা নিকট ভবিষ্যৎতে পেশা পরিবর্তন করবেন কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে পরষ্পরের মধ্যে আলোচনা করে নিলে ভালো। এতে বোঝাপড়া ভালো হয়।

আয় সম্পর্কে- আপনি কোন পেশায় জড়িত রয়েছেন তা জানানোর পাশাপাশি আপনার মাসিক কত টাকা আয় রয়েছে সেটারও একটা ধারনা দিয়ে রাখা উচিত। আমার মতে ছেলেদের বেলায় এই বিষয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ন কারন সংসারের আর্থিক দিকটা সামলানোর দায়িত্ব মূলত ছেলেরাই পালন করে।

আপনার বর্তমান আয় কেমন এবং সাধারনত কোন কোন খাতে আপনার খরচ হয় তার একটা ধারনা হবু স্বামি বা স্ত্রীকে জানিয়ে রাখুন। এই টাকায় সে সংসার সামলাতে পারবে কিনা তা তার কাছে জানতে চান। দেখুন সে কি বলে। সব ঠিক থাকলে শুধু আয়ের জন্য নিশ্চয় বিয়ে আটকে থাকবেনা। তবুও আপনি আপনার দিক থেকে পরিষ্কার থাকুন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা- আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি, জীবনকে কিভাবে সাজাতে চান, আপনি কোন লক্ষ্যের পিছনে ছুটছেন, আপনার কি কি স্বপ্ন রয়েছে ইত্যাদি বিষয়গুলো একে এপরের সাথে আলোচনা করুন। এতে আপনাদের মধ্যে মানসিক দুরুত্ব কমে আসবে, একজন আরেকজনের সাথে ফ্রি হতে পারবেন।

আপনার জীবনধারা- আপনার জীবনধারা (লাইফস্টাইল) সম্পর্কেও আপনার সঙ্গীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করে নিন। এতে একে অপরকে বুঝতে সুবিধা হবে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো হবে।

31 BD Newspaper, Tv, Radio & Service website in 1 App free download

আপনার মানসিকতা- পরিবার, সংসার, বিয়ের পরবর্তি জীবন সহ বিভিন্ন বিষয়ে একে অপরের মানসিকতা জানুন এবং নিজের চিন্তাধারাও সঙ্গিকে জানান। এটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।

আপনি চাইলে বাসর রাত নিয়ে আমাদের এই লেখাটিও পড়ে দেখতে পারেন- বাসর রাতে বর্জনীয়

সাধারনত আমরা যে ভূলটা করি সেটা হলো আমরা বিয়ের কথাবার্তা পাকা হয়ে যাবার পর বা বিয়ে হয়ে যাবার পরে এসব বিষয়ে কথা বলি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অনেকে বাসর রাতে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলে। কিন্তু এসব বিষয় বিয়ে হয়ে যাবার পরে আলোচনা করে কি লাভ? তখন আর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুযোগ থাকেনা । এগুলো বিয়ের পরে করণীয় নয় বরং বিয়ের আগে করণীয় । কথায় আছে, “ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না”। তাই বিয়ের পরে নয় বরং বিয়ের আগেই হবু স্বামী/স্ত্রীর উচিত নিজেদের বিভিন্ন প্রয়োজনিয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে নেয়া।

Add Comment

Click here to post a comment

এই সপ্তাহের সর্বাধিক দেখা ভিডিও:

বাংলাদেশীদের জন্য সেরা অ্যাপ

BD MEDIA MATE APP SCREENSHOT

আমাদের ওয়েবসাইটের জনপ্রিয় পোস্টগুলি:

BEST APP FOR US PEOPLE

US MEDIA MATE APP
Don`t copy text!