করোনা ভাইরাস শুধু বাংলাদেশে নয় বরং সারা পৃথীবিতেই ছড়িয়েছে কিন্তু করোনা ভাইরাসকে নিয়ে বাংলাদেশে যত অমানবিক-ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটছে তা বোধহয় পৃথীবির আর কোথাও ঘটেনি। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আমাদের প্রতিবেশি ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমারেও মানুষ মরছে কিন্তু তারা তো এমন পশুর মতো আচরন করেনি তাহলে আমরা কেন এমন অমানবিক নিকৃষ্ট পশুর মতো আচরন করছি?
করোনার হাসপাতাল করতে না দেয়া, চিকিৎসকদের বাড়ি ভাড়া না দেয়া, রোগিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া, করোনা সন্দেহে মাকে জংগলে ফেলে আসা, মধ্যরাতে যাত্রিকে নির্জন রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যাওয়া, এলাকাবাসি লাশ দাফন করতে না দেয়া সহ প্রতিদিন বিভিন্ন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে চলছে বাংলাদেশে। অবস্থা দেখে মনে হয় এদেশে কি মানুষ বাস করে নাকি পশু বসবাস করে? সর্বশেষ এর সাথে যুক্ত হলো আরো একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। প্রথমত এলাকায় লাশ দাফন করতে না দেয়া এবং পরবর্তিতে অন্যত্র লাশ দাফনের কথা বলে টাকা নিয়ে সেই লাশ দাফন না করে নদীতে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে!
গত ২১ মে গাজীপুর থেকে একটি ট্রাকে করে লালমনিরহাটের উদ্দেশে রওনা দেন ২৩ বছর বয়সি পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আখতার সহ কয়েকজন| পথে সর্দি, জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে তার মৃত্যু ঘটলে এক পর্যায় ট্রাক চালক তার মরদেহ রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে রংপুরের তাজহাট থানা পুলিশ ওই মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে পাঠায়। খবর পেয়ে শুক্রবার মেয়েটির বাবা গোলাম মোস্তফা থানায় গিয়ে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন।
মেয়ের মরদেহ থানা থেকে বুঝে নিয়ে স্থানীয় বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে মরদেহ দাফনের অনুমতি চান। কিন্তু চেয়ারম্যান কোনোভাবেই মরদেহ এলাকায় আনা যাবে না বলে জানিয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন গোলাম মোস্তফা। উপায় না পেয়ে অসহায় বাবা মেয়ের মরদেহ তাজহাটে দাফন করার জন্য এক লাশবাহী গাড়ি চালকের সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকায় চুক্তি করেন। ওই লাশবাহী গাড়ি চালক টাকা নিয়ে মরদেহ দাফনের আশ্বাস দিয়ে বাবাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে তিস্তা নদীতে মরদেহটি ফেলে দেন।
দুই দিন পর সেই মৃতদেহ তিস্তার পানিতে ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। আদিতমারী থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে পরিচয় শনাক্ত হবার পর সেই হতভাগ্য পিতার কাছে পুনরায় লাশ দাফনের দায়িত্ব এসে কাঁধে চাপে। কিন্তু বিস্তারিত ঘটনা জানতে পেরে এবার যেন চেয়ারম্যান বা এলাকাবাসি লাশ দাফনে কোন বাধা দিতে না পারে সেজন্য পুলিশ নিজেরাই দায়িত্ব তুলে নেয় লাশ দাফনের। সোমবার ঈদের দিন বিকেলে আদিতমারী ও পাটগ্রাম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে যৌথভাবে মরদেহের জানাজা শেষে মৃতের নিজ গ্রামে দাফন করে ।
আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বিষয়টি খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, মৃত মৌসুমীর বাবার অনুরোধে পুলিশ সুপারের নির্দেশে থানা পুলিশের সহায়তায় মরদেহটি তার নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
Add Comment