চাঁদপুরে ৯ম শ্রেনীর স্কুল ছাত্রী কাকলি হত্যার রহস্য উদঘাটন ও ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে নিহত ছাত্রীর বিচ্ছিন্ন মাথা এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারাল চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।
মূলত তৃমুখী প্রেমের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায় এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন, মতলব উত্তর থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধা।
এর আগে গত বুধবার দুপুরে উপজেলার মমরুজকান্দি সপ্তগ্রাম অক্সফোর্ড একাডেমি নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ থেকে ঘটনার শিকার শারমিন আক্তার কাকলীর মাথাবিহীন লাশ পাওয়া যায়। হত্যাকাণ্ডের শিকার শারমিন আক্তার কাকলী এবং ঘাতক সাইফ উদ্দিন মতলব উত্তরের মমরুজকান্দি সপ্তগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
এই হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্ট পুলিশের তদন্তকারী দল জানিয়েছে, ঘটনার দিন সকালে মুঠোফোনে শারমিন আক্তার কাকলীকে ফোন দিয়ে অক্সফোর্ড একাডেমিতে দেখা করতে বলে তার পুরাতন প্রেমিক সহপাঠী সাইফ উদ্দিন।
(এটি স্থানিয় একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল যা করোনা ভাইরাসের কারনে বেশ কিছুদিন যাবত বন্ধ রয়েছে ফলে স্কুলটিতে কেউ প্রবেশ করেনা)।
অক্সফোর্ড একাডেমিতে আগে থেকেই হাজির ছিল কাকলীর নতুন প্রেমিকও।
(পুরাতন এবং নতুন- উভয় প্রেমিকের পরিচিয় হওয়ার পরে তারা জানতে পারে যে কাকলি তাদের উভয়ের সাথেই প্রেম করছে। তারা এর প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।)
সেখানে তিনজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়, এবং দুই প্রেমিক মিলে কাকলিকে মারধর করে।
এসময় সাইফ উদ্দিন প্রতারিত হয়েছে এবং নতুন প্রেমিকও প্রতারিত হতে পারে; এমন শঙ্কা থেকেই তারা দুজনে মিলে কাকলীকে গলা কেটে হত্যা করে। পরে ঘাতকরা কাকলীর মাথা কেটে আলাদা করে ফেলে এবং বিচ্ছিন্ন মাথা প্রায় এক হাজার গজ দূরের একটি ডোবায় ফেলে দেয়।
এই ঘটনার পর নতুন প্রেমিক কৌশলে গা ঢাকা দিলেও সাইফ উদ্দিন পাশের সুজাতপুর গ্রামে নিজের বাড়িতেই থেকে যায়। তবে গত বুধবার কাকলীর লাশ উদ্ধারের পর সে বাড়ি থেকে গা ঢাকা দিয়ে আশ্রয় নেয় নানার বাড়িতে।
সূত্রটি আরো জানায়, গোয়েন্দারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সাইফ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে এবং পরে সাইফের দেখিয়ে দেওয়া স্থান থেকে কাকলীর মাথা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারাল চাকু উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এই ঘটনায় জড়িত পালিয়ে যাওয়া অপর কিশোরকেও খুঁজছে পুলিশ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মতলব উত্তরের পূর্ব ইসলামাবাদ গ্রামের প্রবাসী বজলু বেপারীর বড় মেয়ে শারমিন আক্তার কাকলীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল পাশের সুজাতপুর গ্রামের রাসেল আহমেদের ছেলে সাইফ উদ্দিনের।
এরই মাঝে গত কয়েক মাস আগে কাকলী সাইফ উদ্দিনকে বাদ দিয়ে নতুন করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে এলাকায় নতুন আসা রাজশাহীর আরেক কিশোরের সঙ্গে। বিষয়টি বুঝতে পেরে সাইফ উদ্দিন খুব ঠাণ্ডা মাথায় ওই কিশোরের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। মূলত ব্যর্থ প্রেমের প্রতিশোধ নিতেই তাদের দুজনের মাঝে এই সখ্যতা তৈরি হয়েছিল।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মতলব উত্তর থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানের নির্দেশে-মতলব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আহসান হাবিবের দিক নির্দেশনায় পুলিশের তিনটি টিম চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটন এবং দ্রুততার সঙ্গে হত্যার প্রকৃত রহস্য বের করে নিয়ে আসে।
গ্রেপ্তারের পর সাইফ উদ্দিন নামে এই কিশোর কাকলী হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেয় পুলিশের কাছে। রাজশাহী থেকে আসা রাজমিস্ত্রির কাজের ওই কিশোর গা ঢাকা দিলেও তাকে গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে বলে জানান ওসি।
Add Comment