ডাইনোসর নামটি শুনলেই আমাদের মাঝে এক অদ্ভুত আকর্ষন কাজ করে। এই পৃথীবিতে যখন মানুষের কোন অস্তিত্ব ছিলোনা তখন পৃথীবিজুড়ে রাজত্ব করেছিলো এই প্রানীরা।
বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন যে ডাইনোসররা প্রায় ১ হাজার ৬০০ লক্ষ বছর ধরে পৃথীবিতে রাজত্ব করেছে। সব রাজত্বের যেমন শেষ আছে তেমনি ডাইনোসরদের রাজত্বও একসময় শেষ হয়ে গিয়েছ, তারা চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে এই পৃথীবি থেকে। শুধু মাটির নিচে চাপা দিয়ে রেখে গিয়েছে তাদের কিছু স্মৃতিচিন্হ।
এরপর কেটে গেছে কোটি কোটি বছর। কেউ কখনো জানতে পারেনি যে একসময় পৃথীবিতে এমন কিছু প্রানী ছিলো। উনবিংশ শতাব্দিতে প্রথম ডাইনোসরের ফসিল আবিষ্কার হয়। এমন আবিষ্কারে সারা পৃথীবিজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিজ্ঞানীরা হন্য হয়ে খুজতে শুরু করেন পৃথীবির আরো কোথাও ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া যায় কিনা। এরপর ধীরে ধীরে পৃথীবির বিভিন্ন অন্চলে আরো অনেক ডাইনোসরের ফসিল ও ডিম খুজে পাওয়া যায়।
এখন আমাদের অনেকের মনেই এই প্রশ্নের উদয় হতে পারে যে আমাদের বাংলাদেশেও কি কখনো ডাইনোসরের বসবাস ছিলো?এই প্রশ্নের শতভাগ সঠিক উত্তর দেয়া এখনো সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ধারনা করা হয় যে বাংলাদেশে ডাইনোসররা বসবাস করতোনা।
কারন ডাইনোসররা যখন পৃথীবিতে ছিলো তখন বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা সাগরের পানির নিচে তলিয়ে ছিলো। এরপর ডাইনোসররা পৃথীবি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার বহু পরে মাত্র ১ কোটি বছর আগে গঙ্গা ও বক্ষ্যপুত্রের পলি জমে জমে বাংলাদেশের বর্তমান ভুখন্ড সৃষ্টি হয়।
সুতরাং যেহেতু বাংলাদেশের বেশিরভাগ এলাকা সৃষ্টিই হয়েছে ডাইনোসর বিলুপ্ত হওয়ার পরে এবং ডাইনোসর থাকাকালীন উক্ত এলাকাগুলো এখনকার মতো বিচরনযোগ্য ছিলোনা বরং পানির নিচে তলিয়ে ছিলো তাই যতদিন কোন প্রমান পাওয়া না যাবে ততদিন সহজ হিসেবে ধারনা করা যায় যে হয়তো বাংলাদেশে ডাইনোসর বসবাস করতোনা বা নিয়মিত বিচরন করতোনা।
তবে মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারতে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে ডাইনোসরের ফসিল ও প্রচুর পরিমানে ডিম পাওয়া গিয়েছে। তাই এটাও নিশ্চিত ভাবে বলা যায়না যে বাংলাদেশে কখনো ডাইনোসর বাস করতোনা।
যেহেতু বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারতের কিছু কিছু জায়গায় ডাইনোসরের বসবাসের প্রমান পাওয়া গিয়েছে তাই একটি সম্ভবনা থেকে যায় যে, বাংলাদেশের সর্বত্র ডাইনোসরের বিচরন না থাকলেও কিছু কিছু অন্চলে তাদের বিচরন থাকলেও থাকতে পারে।
আর আরেকটি বিষয় আমাদের জেনে রাখা উচিত যে, যদি বাংলাদেশে ডাইনোসর থেকেও থাকে তবুও তাদের ফসিল পাওয়ার সম্ভবনা কম। এর প্রধান কারন হলো ফসিল সাধারনত উচু ও শুষ্ক ভূমিতে দীর্ঘদিন ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে কিন্তু বাংলাদেশ যেহেতু ভেজা পলিমাটি দিয়ে গঠিত তাই এখানে ফসিল দীর্ঘদিন সংরক্ষিত না থেকে দ্রুত পঁচে যাবে। আর দ্বিতীয়ত যেহেতু কোটি বছর ধরে পলিমাটি জমে জমে এই ভূখন্ড তৈরি হয়েছে তাই ফসিল থাকলেও তা মাটির অনেক অনেক নিচে চাপা পড়ে আছে যা খনন করে বের করা খুবই কষ্টকর হবে।
তবে বিজ্ঞানীরা যদি ব্যাপক মাত্রায় খনন কাজ চালায় তবে হয়তো কোন ফসিল পাওয়াও যেতে পারে। আর ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া না গেলেও প্রাগৈতিহাসিক যুগের নানা উদ্ভিদ, বিশালাকার জলজ প্রানী ও অন্যান্য প্রানীর দেহাবশেষ বাংলাদেশের ভুখন্ডে পাওয়া যেতে পারে।
Add Comment