কথায় আছে, “বেশি ভাল ভাল না”। অনেক সময় পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে নিজের খারাপ রুপটা প্রকাশ করতে হয়। ব্যবসায়িক জগত এমন একটি জগত যেখানে শুধু ভালমানুষি দিয়ে টিকে থাকা অসম্ভব বরং প্রয়োজন অনুযায়ি কিছুটা “খারাপ” হলে সেটাই আপনাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
এই গুনাবলিগুলো একজন ব্যবসায়ির পাশাপাশি অফিসের বস বা ব্যাবস্থাপকদেরও থাকা উচিত। চলুন তাহলে দেখা নেয়া যাক..
“না” বলতে জানতে হবে:
অনেক সময় নিশ্চিত ক্ষতি হবে জেনেও চক্ষু লজ্জার কারনে বা অন্য যেকোন কারনেই হোক আমরা না বলতে পারিনা। তবে ব্যবসাতে সফল হতে হলে আপনাকে না বলতে জানতে হবে।
ধরুন, পরিচিত কেউ বাকি চাইছে। আপনি জানেন যে তার স্বভাব ভালোনা। সে সময়মত টাকা পরিশোধ করেবেনা কিন্তু চক্ষু লজ্জার কারনে আপনি তাকে “না” বলতে পারছেননা। এতে আসলে আপনার ক্ষতি হবে। অথবা ধরুন, কোন আত্বীয়কে প্রতিষ্ঠানের এমন পদে বসিয়ে রেখেছেন যে পদের যোগ্যতা তার নেই কিন্তু তাকে বাদ দিতে পারছেননা, দ্বিধাবোধ করছেন। দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে তাকে বলুন যে তোমাকে দিয়ে হচ্ছেনা, ভালোমত কাজ করো নয়তো তোমাকে বাদ দিয়ে দিবো।
কঠোরতা দেখাতে হবে:
সাদা সিধে নরম মনের একজন ব্যবসায়ির পক্ষে বর্তমান কঠোর প্রতিযোগিতার বাজারে এবং প্রতারক দিয়ে ভরা ফাকিবাজির দুনিয়ার টিকে থাকাই সম্ভব নয়, সাফল্য তো দুরের কথা।
আমি আপনাকে ভালো মানুষ হতে মানা করছিনা, আমি শুধু এটুকু বলতে চাচ্ছি যে আপনার ভালো মানুষিকতা বা মহানুভবতার সুযোগে কেউ যেন আপনার মাথায় কাঠাল ভেংগে খেতে না পারে।
আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি যে, বর্তমানে কঠোর ও দাপুটে মানুষরাই ব্যবসায়িক ও কর্ম জীবনে ভালো করছেন। সুতরাং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করুন।
কর্মী বা অধস্তনদের সাথে দুরত্ব বজায় রাখুন:
মানুষের সাথে মিশতে পারা একটি ভালো গুন। তবে ব্যবসায়িক জগতে সফল হতে হলে আপনাকে এই ভালো গুনটি একটু দুরে সরিয়ে রাখতে হবে। বিশেষ করে যাদেরকে হুকুম দিয়ে আপনার কাজ করিয়ে নিতে হবে এবং যাদেরকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে এমন অধস্তন কর্মীদের সাথে দুরত্ব বজায় রাখুন।
কর্মী বা অধস্তনদের সাথে বেশি মিশলে এরা আপনার কথার গুরুত্ব দিবেনা, অন্যের সামনে আপনাকে সম্মান করবেনা এবং তাদের পছন্দ নয় এমন কোন কাজের হুকুম দিলে আপনার সাথে তর্ক করবে।
মোট কথা নীচু স্তরের লোকদের সাথে বেশি মিশলে তারা আপনাকে তাদের চাইতেও নীচু স্তরের মনে করবে। আপনার গুরুত্ব ভুলে যাবে ও আপনাকে মূল্যায়ন করবেনা।
কর্মীদের খোজখবর রাখুন, তাদের সাহায্য করুন, তবে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে। মিলেমিশে একাকার হবার দরকার নেই।
শাস্তি দিন:
ক্ষমা মহৎ গুন। তবে ব্যবসায়িক জগতে এই মহৎ গুন বেশি দেখালে আপনার জন্য তা ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াবে। অন্যায়ের শাস্তি না পেলে অন্যায়কারি বেপরোয়া হয়ে যায় এবং নিজেকে অধিক ক্ষমতাবান ভাবতে শুরু করে পাশাপাশি ভূলের মাশুল দিতে না হলে মানুষের মাঝে গা-ছাড়া ভাব চলে আসে। তাই কর্মীরা যেন বেপরোয়া হয়ে উঠতে না পারে এবং কাজে ঢিলেমি না করে সেজন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়। পরিস্থিতি অনুযায়ি ১ বার, ২ বার বা সর্বোচ্চ ৩ বার ক্ষমা করতে পারেন তবে বারবার ক্ষমা করতে যাবেন না। অন্যায় বা ভূল করলে বারবার ক্ষমা না করে শাস্তি দিন।
ক্ষমতা দেখানো:
নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে বেড়ানো মোটেই ভালো কাজ নয়। তবে ব্যবসায়িক জগতে আপনাকে পরিস্থিতি অনুযায়ি এ কাজটা করতে হবে। যারা আপনাকে দূর্বল ভাবে বা মান্য করেনা সঠিক সময়ে তাদেরকে নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে দিন। এতে করে তারা যেমন সোজা হয়ে যাবে তেমনি তাদের দেখাদেখি অন্যরাও সোজা হয়ে যাবে।
সফল ব্যবসায়ি হতে হলে কোন কোন ভাল গুনাবলি থাকা প্রয়োজন তা নিয়ে অনেক লেখা আপনি সহজেই খুজে পাবেন তবে কোন কোন “খারাপ” স্বভাব থাকা প্রয়োজন তা নিয়ে কোন তথ্য হয়ত ইন্টারনেট জগতের কোথাও খুজে পাবেননা। আমি যে বিষয়গুলো এখানে উল্লেখ করেছি তা বাস্তব জগতের সাথে আপনি নিজেই মিলিয়ে দেখুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন প্রতিটি বিষয় কতটা সত্য।
লেখাটি ভালো লাগলে এবং যৌক্তিক মনে হলে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। আপনার কিছু বলার থাকলে মন্তব্যের ঘরে লিখতে পারেন। নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভ্রমন করার আমন্ত্রন রইলো। ধন্যবাদ।
Add Comment