শুরুটা ভালো করতে পারলে পুরো অধ্যায়টাই ভালো হতে পারে । বাসর রাত হচ্ছে জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের শুরু । এই রাতটি নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা থাকে । এই রাতের স্মৃতি সারাজীবন আমাদের মনে গেথে থাকে। তবে ছোট একটি ভুলের জন্যও আমাদের জীবনের এই সুন্দর সময়টা ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে । তাই আসুন জেনে নেই বাসর রাতে কোন কাজ গুলো করা একদমই উচিত নয় ।
* জ্ঞান দেয়া: বাসর রাত অবশ্যই জীবনের একটা বিশেষ সময় । সারা জীবন স্বামী স্ত্রীর মনে এই রাতটির কথা স্মৃতি হয়ে রয়ে যায় । আমাদের দেশে বহু লোকই বাসর রাতে একে অপরকে জ্ঞান দিতে যেয়ে এই রাতের পরিবেশটাকে গুরুগম্ভীর ও তিক্ত করে তোলে । আমাদের পরিবারে কিভাবে চলতে হবে, শশুড়-শাশুরীর সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়ার সময় এটা নয় । সাধারনত পুরুষরাই এই ভূলটা বেশি করে । তারা নতুন বৌকে নিজের এবং নিজের পরিবারের সাথে কিভাবে চলতে হবে, কিভাবে মানিয়ে নিতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে বোঝাতে গিয়ে পরিবেশটাকেই নষ্ট করে ফেলে। আরে ভাই এসব বিষয়তো বিয়ের আগেই আলোচনা করে নেয়া উচিত ।
স্বামী স্ত্রী একজন আরেকজনের কাছ থেকে বিয়ের পর কেমন আচরন আশা করে, শশুর শাশুড়ির বিষয়ে কেমন মনোভাব পোষন করে এবং স্বামী স্ত্রী পরষ্পরের মানসিকতা কেমন তা বিয়ের আগেই একান্তে দুই একদিন আলোচনা করে নেয়া উচিত । বিয়ে হয়ে যাবার পর এসব আলোচনা করে কি লাভ ? বিয়ের পর যদি বৌ বলে- “আমি শশুর শাশুরির সেবা করতে পারবোনা বা শশুর শাশুড়ির সাথে একত্রে সংসার করতে পারবোনা, আমি আলাদা সংসার করতে চাই” তখন কি সেই বৌ তালাক দিয়ে আবার বিয়ে করতে উদ্দ্যত হবেন ? এসব বিষয়গুলো বাসর রাতে আলোচনা না করে বিয়ের আগেই আলোচনা করে ফেলুন ।
* যৌনমিলন: আমার মতে বাসর রাতে যৌনমিলন করতে যাওয়া একদমই একটি ভুল কাজ । একজন মানুষের সাথে সম্পর্কের শুরুতেই এমন করাটা অস্বস্তিদায়ক । এসময় সাধারনত মেয়েরা মানসিকভাবেও এর জন্য প্রস্তত থাকেনা । এর জন্য পরে বহু সময় পাবেন । প্রথম কয়েকদিন একে অপরকে জানুন, বুঝুন। পুরুষরাই মূলত এই ভূলটা করে থাকে ।
* পুরাতন প্রেমিক প্রেমিকার কথা বলা: বাসর রাতে স্বামি স্ত্রীর উচিত পুরাতন প্রেমিক প্রেমিকার বিষয় আলোচনা না করা । অতীতকে নিয়ে মাখামাখি করে লাভ নেই । মাথা থেকে অতীতে আপনার জীবনে কে ছিলো তা ঝেড়ে ফেলে বাকি জীবন যাকে নিয়ে কাটাবেন তাকে নিয়েই পরিকল্পনা করুন ।আর যে অতীতের কারনে ভবিষ্যৎতে সমস্যা হতে পারে সেরকম কোন অতীত না থাকাই ভালো । আর স্বাভাবিকভাবেই কোন স্বামি স্ত্রী তার জীবনসঙ্গির মুখ থেকে অন্যকে ভালোবাসার কথা শুনতে চায়না ।
* তুমি সুন্দর তাই তোমাকে ভালোবাসি বা পছন্দ করি: বাসর রাতে বা বিয়ের প্রথম দিকে অনেক সময় স্বামি স্ত্রী একে অপরের সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে গিয়ে তুমি সুন্দর তাই তোমাকে ভালোবাসি বা তুমি এত সুন্দর যে তোমাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি- এ জাতীয় কথাবার্তা বলে থাকেন । সৌন্দর্যের প্রশংসা অবশ্যই করবেন তবে সেটা যেন সঠিক পথে হয় ।
শুধু দেখতে সুন্দর বলে তাকে পছন্দ করেছেন বা ভালোবেসে ফেলেছেন এসব ফালতু কথা বলতে যাবেন না । যাদের স্বামি স্ত্রীর চেহারা খুব একটা সুন্দর না তারা কি একে অপরকে ভালোবাসে না ? আপনার সংগীর চেহারা সুন্দর না হলে কি আপনি তাকে পছন্দ করতেন না ? বা এখন সুন্দর হলেও কোন কারনে কয়েক বছর পর যদি চেহারার সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কি আপনার ভালোলাগাও শেষ হয়ে যাবে ? তাই এধরনের বোকামি মার্কা কথা না বলাই ভালো ।
* কোন কিছু জানার জন্য জোরাজুরি করা: এই রাতে স্বামী বা স্ত্রী একে এপরের ব্যক্তিগত জীবনের কোন গোপন কথা বা কারো সাথে প্রেম ভালোবাসা আছে কিনা তা জানার জন্য জোড়াজুরি করাটা ভূল কাজ । এই বিষয়টাও বিয়ের আগেই জেনে নেয়া উচিত । স্বামি – স্ত্রী দুইজনেরই জেনে রাখা উচিত যে তার সঙ্গিটি বিয়েতে রাজি কিনা এবং একে অপরকে গ্রহন করতে পারবে কিনা ।
* স্বামি বা স্ত্রীর পরিবার বা আত্বীয়স্বজন নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করা: স্বামি স্ত্রী একে অপরের আত্বীয় স্বজন নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করা ঠিক নয় । আর বাসর রাতে বা বিয়ের প্রথম কয়েকদিনের মাঝেই এটাতো একদমই ঠিক হবেনা ।
* খাবার নিয়ে খোটা দেয়া: খাবার রান্না ভালো হয়নি বা খাবারের আইটেম কম হয়েছে- খাবার নিয়ে এধরেন কোন খোটা দেয়া একদমই উচিত নয় । আর বিষয়টা একধরনের ছোটলোকির পর্যায়ে পরে । কেউতো নিশ্চয় ইচ্ছা করে খাবার খারাপ রান্না করেনা । তারপরও যদি খাবার মজাদার না হয় তাহলে এটা নিয়ে খোটা দেয়ার কিছু নেই । আর স্বামী বা স্ত্রী উভয় পক্ষই নিজেদের সাধ্যমতো যেসব আইটেম আয়োজন করেছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত।
এই লেখাটি পড়তে ক্লিক করুন বিয়ের প্রস্তুতি : নিজেকে প্রস্তুত করবেন যেভাবে💞💑💞
* নিজের খুবই একান্ত গোপনীয় কথা সেধে সেধে স্বামি বা স্ত্রীকে বলা: আবেগের বশবর্তি হয়ে বাসর রাতেই খুব গোপন বা একান্ত ব্যক্তিগত কথা একে অপরকে না বলাই উত্তম । এতর হিতে বিপরীত হতে পারে । আগে একে অপরকে জানুন বুঝুন । তারপর কাকে কোন কথা, কখন কিভাবে বলতে হয় সেটা নিজেই বুঝতে পারবেন । তখন সেভাবে কথা বলবেন।
Add Comment