বিভিন্ন ধরনের নির্মান কাজের জন্য সিমেন্ট একটি আবশ্যকীয় উপকরন। নির্মানকাজে ব্যবহৃত সিমেন্টের গুনগত মান ভালো না হলে তা ভবিষ্যতে বড় ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে। তাই যেকোন ধরনের স্থাপনা তৈরির আগে সিমেন্টের মান যাচাই করে নেয়া উচিত। তবে সাধারন মানুষের পক্ষে পরীক্ষাগারে নিয়ে সিমেন্টের মান যাচাই করা সম্ভব নয় বললেই চলে। তাই পরীক্ষাগার ছাড়াই ভালো সিমেন্ট চেনার কিছু সহজ উপায় আমি এখানে আপনাদের জন্য তুলে ধরছি। এই বিষয়গুলো জানা থাকলে আপনারা নিজেরাই সিমেন্টের মান সম্পর্কে ধারনা করতে পারবেন, কোন ইন্জিনিয়ারের প্রয়োজন হবেনা।
পরীক্ষাগার ছাড়াই সহজে ভালো সিমেন্ট চেনার উপায়:
১* উৎপাদনের তারিখ দেখুন:
সাধারনত সিমেন্টের মেয়াদ থাকে ৯০ দিন বা তিন মাস পর্যন্ত। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে সিমেন্টের শক্তি কমতে থাকে। উৎপাদনের পর যত দিন যাবে সিমেন্টের শক্তি তত কমতে থাকবে।
পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে,
৩ মাস পর সিমেন্টের শক্তি কমে যায় ২০%-৩০%
৬ মাস পর সিমেন্টের শক্তি কমে যায় ৩০%-৪০%
১২ মাস পর সিমেন্টের শক্তি কমে যায় ৫০% এরও বেশি!
তাই সিমেন্ট উৎপাদনের পর যত দ্রুত সম্ভব ব্যবহার করুন। সিমেন্টের ব্যাগে উৎপাদনের তারিখ বা মাস দেয়া থাকে, সেই তারিখ দেখে ক্রয় করুন। তিন মাসের বেশি পুরানত সিমেন্ট ক্রয় করবেন না।
২* তাপমাত্রা পরীক্ষা:
কারখানায় সিমেন্ট উৎপাদন করার পর তা অনেকটাই গরম থাকে। এমনকি অনেক সময় একত্রে কয়েকশ বা কয়েক হাজার বস্তা সিমেন্ট রাখা হলে তা ৪-৫ দিন পর্যন্ত গরম থাকে যা সিমেন্টের ব্যাগ হাত দিয়ে স্পর্শ করলেই বোঝা যায়। সিমেন্ট এমন গরম অবস্থায় পাওয়া গেলে বুঝতে হবে এগুলো উৎপাদনের পর বেশি সময় পার হয়নি।
তবে উৎপাদনের ৪/৫ দিন পর সিমেন্টে গরম ভাব থাকা উচিত নয় বরং তা ঠান্ডা অনুভূত হওয়াটাই স্বাভাবিক। উৎপাদনের ৪/৫ দিন পরও সিমেন্টে গরম ভাব থাকলে তা ভালো নয়।
৩* সিমেন্টের রং:
ভালো মানের সিমেন্টের রং কালো, সাদা, বা মাটির মতো হবেনা বরং ধূসর রংয়ের হবে। আর একটি সিমেন্টে ব্যাগের সবটুকু সিমেন্ট একই রংয়ের হবে। ভিন্নতা থাকবেনা।
৪* মসৃনতা পরিক্ষা:
ভালো সিমেন্ট হবে পাউডারের মত একদম মসৃন। এতে কোন ধরনের খসখসে, রুক্ষ বা বালু বালু ভাব থাকবেনা। রুক্ষ বা বালু বালু ভাব থাকলে বুঝতে হবে সেই সিমেন্ট কিছুটা কম মানসম্পন্ন।
৫* সিমেন্ট দানাদার কিনা তা লক্ষ্য করুন:
ভালো সিমেন্ট একেবারে মিহি ঝরঝরে হয়ে থাকে। এতে কোন দানাদার বা গুড়ি গুড়ি ভাব থাকেনা। যদি দেখেন যে সিমেন্ট দানাদার হয়ে গেছে তাহলে বুঝতে হবে যে সেই সিমেন্টে পানি লেগেছে বা সেই সিমেন্ট অধিক আদ্রতা শোষন করেছে। এমন সিমেন্ট ব্যবহার করা ঠিক হবেনা।
৬* সিমেন্ট পানিতে মিশিয়ে পরীক্ষা:
এক মুঠো সিমেন্ট এক বালতি পানিতে ফেললে তা সাথে সাথেই পানিতে তলিয়ে যাবেনা বরং সিমেন্টের উপরের অংশ পানিতে ডুবতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগবে এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এটি পানিতে ডুবে যাবে। পানিতে মিশে যাওয়ার পরও ভেসে থাকবেনা। অর্থ্যাৎ সাথে সাথেই পানিতে তলিয়ে যাবেনা (১০-১২ সেকেন্ড সময় লাগতে পারে) আবার পানিতে বেশিক্ষন ভেসেও থাকবেনা। এটি ভালো সিমেন্টের গুনাগুন প্রকাশ করে।
৭* ফাটল পরীক্ষা:
পানির সাথে সিমেন্ট মিশিয়ে একটি কাচের থালার উপর ভালমত প্রলেপ দিয়ে তা ২৪ ঘন্টার জন্য পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। যদি সিমেন্টের প্রলেপ ভালো থাকে তবে তা ভালো সিমেন্ট আর যদি প্রলেপের মাঝে ফাটল দেখা দেয় তবে তা মানসম্পন্ন সিমেন্ট নয়।
৮* হাতের তালুতে নিয়ে পরিক্ষা:
এক মুঠো সিমেন্ট হাতের তালুতে স্তুপ করে রাখলে যদি তা ভালো সিমেন্ট হয় তবে তা স্তুপ আকারেই থাকবে গড়িয়ে পড়বে না।
* ভেজা বা স্যাতসেতে স্থানে মজুদ করে রাখা সিমেন্ট ক্রয় না করা:
দোকান থেকে সিমেন্ট ক্রয় করার সময় যদি দেখেন যে দোকানদার ভেজা বা স্যাতস্যাতে স্থানে সিমেন্ট মজুদ করে রেখেছে তবে সেই সিমেন্ট ক্রয় করবেন না। কারন এতে করে বেশি আদ্রতা শোষন করার ফলে সিমেন্টের গুনগত মান কমে যায়।

আপনি এটিও পড়তে পারেন- ভালো রড চেনার উপায় আপনি এটিও পড়তে পারেন- সহজেই আপনার বাড়িকে পরিবেশ বান্ধব বাড়ি করে তুলবেন যেভাবে
উপরের বিষয়গুলোর মাধ্যমে যদিও সিমেন্টের মান সম্পর্কে ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করা যায়না তবে এসব বিষয়গুলো ঠিক থাকলে মান ভালো হবে বলে আশা করা যায়। তাই লাখ লাখ টাকা খরচ করে কোন স্থাপনার নির্মান কাজ শুরু করার আগে উপরের বিষয়গুলো যাচাই করে সিমেন্ট ক্রয় করুন। এখানে আপনাদের জন্য সহজ ভাষায় ভালো সিমেন্ট চেনার সহজ উপায়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি তথ্যগুলো আপনাদের কাজে লাগবে। যদি লেখাটি ভালো লেগে থাকে তবে শেয়ার করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ রইলো। তথ্যবহুল লেখাগুলো শেয়ার করলে আমরাও উৎসাহিত হবো পাশাপাশি মানুষও উপকৃত হবে।
Add Comment