স্বাধীনতার পর দেখতে দেখতে অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশের। মানুষের বয়সের সাথে তুলান করলে চুল-দাড়ি পেকে যাওয়ার বয়স হয়ে গেছে ১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের।
পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষতে বসলে হয়তো দেখা যাবে না পাওয়ার সংখ্যাটাই বেশি। সবচেয়ে মন খারাপ হয় তখন যখন দেখা যায়, যে জিনিসগুলো খুব সহজেই পাওয়ার কথা ছিলো সেগুলোও পাওয়া হয়নি।
এদেশের অনেক কিছুই আমাদের মনমতো হয়নি। দেশটাকে নিয়ে আমাদের হতাশা আর আফসোসের হয়তো শেষ নেই কিন্তু তাই বলে দেশটাকে যারা দিয়ে গেছেন তাদের কি দোষ? তাদের প্রতি কিসের ক্ষোভ? কেন তাদেরকে যথাযথ সম্মান আমরা দিবোনা? কেন তাদেরকে আমরা অবজ্ঞা করবো?
মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের স্বাধীনতার পিছনে অবদান রাখা নেতৃবৃন্দের কথা শুনলে অনেকেই দেখি অবজ্ঞা করে। অনেকেই গালিও দেয়।
মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধার কথা শুনলে অনেকেই বিরক্ত হয় আবার কেউ কেউ হাসাহাসিও করে। কিছু কিছু জায়গায় লোক দেখানো সম্মান করা হয় তবে মন থেকে সম্মান করে খুব কম মানুষ।
একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, এদেশের বহু মানুষ আজও চরম দারিদ্রতার মাঝে বসবাস করে এটা মুক্তিযোদ্ধাদের দোষ নয়। দেশে সীমাহিন দূর্নীতি ও লুটপাট চলছে, এটা মুক্তিযোদ্ধাদের দোষ নয়। দেশের মানুষ অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত এটা মুক্তিযোদ্ধাদের দোষ নয়।
তারা তাদের দায়িত্বটা পালন করে গেছেন। একটা স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়ে গেছেন নিজেদের জীবন বাজি রেখে বা জীবনের বিনিময়ে। পরবর্তীতে হয়তো আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি কিন্তু এর জন্য তো মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া নেতৃবৃন্দরা দায়ি নয়। তারা যেটুকু করে গেছে সেটুকুর জন্য তাদের পাপ্য সম্মান দেয়াটা আমাদের দায়িত্ব।
হয়তো এখন যেভাবে দেশ পরিচালিত হচ্ছে সেটা আমাদের পছন্দ না হতে পারে। হয়তো আমাদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, এমপি, মন্ত্রীদের কর্মকান্ড আমাদের হতাশ করতে পারে। হয়তো আমাদের মাঝে রাজনৈতিক দলগত বিরোধ থাকতে পারে। থাকতে পারে আরো বিভিন্ন ক্ষোভ, দূখ: বা হতাশা কিন্তু দেশটাকে ভালোবেসে যারা তাদের জীবন যৌবন বিলিয়ে দিয়ে গেছেন তাদের প্রতি কিসের ক্ষোভ? কেনইবা অবজ্ঞা?
মানুষ মাত্রই ভূল। সবার জীবনেই ভূল ভ্রান্তি থাকতে পারে, একজনের মতের সাথে অন্যজনের মতের কিছুটা পার্থক্য থাকতেই পারে। দেশটাকে ভালোবেসে যারা তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে গেছেন তাদের জীবনের বিভিন্ন ছোটখাটো ভূল বা ব্যথর্তার ঘটনা সামনে টেনে এনে তাদের অসম্মান করা আমাদের উচিত হবেনা।
আমাদের বর্তমান হতাশা, বর্তমান রাজনৈতিক বিরোধ বর্তমানের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাক। অতীতের যে মানুষগুলোর এসবের সাথে কোন যোগসূত্র নেই তাদেরকে এসবের জন্য দায়ি করবো কেন?
আসুন একজন নূন্যতম বিবেকবান মানুষ হিসেবে তাদের অবদানের জন্য তাদেরকে সম্মান জানাই আর আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের ভূলত্রুটি ক্ষমা করে তাদেরকে জান্নাত দান করেন।
Add Comment