বিমান বাহিনীর শক্তির বেহাল দশা! ২ যুগে যুক্ত হয়নি ১টি যুদ্ধবিমানও।
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রযুক্তি ও শক্তিতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চটকদার কথাবার্তা প্রায়ই শোনা গেলেও বাস্তবে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর তিনটি শাখারই শক্তি- সামর্থ্য খুবই দূর্বল।
এর মাঝে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কথা। অবস্থা দেখে মনে হয় যেন দূর্বল হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে বাহিনীটি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের এগিয়ে যাওয়ার গতি ও বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার গতির মাঝে রয়েছে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
অন্যরা যেখানে ১০ পা এগিয়ে যায় বাংলাদেশ সেখানে মাত্র ১ পা এগোয় তবে চিৎকার করে ১০ পা যারা এগিয়েছে তাদের চাইতেও বেশি!
সরাসরি যুদ্ধে ভারতকে আটকানো তো বহু দুরের কথা মায়ানমারের কাছেও শোচনীয় ভাবে পরাজিত হতে পারে বাংলাদেশ!
এমনকি চট্রগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গা মায়ানমার তছনছ করে দিতে পারবে সহজেই।
দীর্ঘদিন যাবত পরিকল্পিতভাবে মায়ানমার তাদের তলোয়ার শানিত করলেও বাংলাদেশ নিজেদের তলোয়ার বা ঢাল কোনটিই প্রস্তুত করেনি!
ফলে মায়ানমারকে পাল্টা আক্রমন করা বা তাদের আক্রমন ঠেকানোর মত ক্ষমতা কোনটিই বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর নেই।
বাংলাদেশের যুদ্ধবিমান বলতে রয়েছে শুধু কয়েকটি মিগ-২৯ ও কিছু এফ-৭ বিমান।
বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালি যুদ্ধবিমান হলো মিগ ২৯ যুদ্ধবিমান। বাংলাদেশের কাছে রয়েছে মাত্র ৮টি মিগ ২৯ যু্দ্ধবিমান তাও আবার সবগুলোই ২৩ বছর পুরানো! অপরদিকে মায়ানমারের কাছে রয়েছে ৩০ টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান! অর্থ্যাৎ বাংলাদেশের চাইতে প্রায় চার গুন বেশি।
বাংলাদেশের ২য় শক্তিশালী যুদ্ধবিমান হলো এফ-৭ বি.জি যুদ্ধবিমান যা বলতে গেলে বর্তমানে উন্নত কোন দেশ ট্রনিংয়ের জন্যও ব্যবহার করেনা! তাও আবার পুরাতন ও আধুনিক যুদ্ধের উপযোগি নয়।
এছাড়া বাংলাদেশের একটিও এট্যাক হেলিকাপ্টার নেই তবে মায়ানমারের কাছে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির ৮টি এডভান্সড মাল্টিরোল এম.আই-২৮ এট্যাক হেলিকাপ্টার!
এই এম.আই-২৮ এট্যাক হেলিকাপ্টার দিয়েই মায়ানমার কিছুদিন আগে বাংলাদেশের আকাশসীমা লংঘন করেছে। ১ মিনিট বা ২ মিনিট নয় বরং টানা ৩ ঘন্টা এই এট্যাক হেলিকাপ্টার বাংলাদেশের ভিতরে ঘোড়াঘুড়ি করলে বাংলাদেশ কিছুই করতে পারেনি।
আমি সাধারন হেলিকাপ্টারের কথা বলছিনা, এট্যাক হেলিকাপ্টারের কথা বলছি। তবে সাধারন হেলিকাপ্টারের দিক থেকেও মায়ানমার সংখ্যায় এগিয়ে।
বাংলাদেশের এয়ার ডিফেন্স বলতেও তেমন কিছুই নেই। আছে কেবল কয়েকটি এফ.এম-৯০ সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল (SAM)। যার রেন্জ মাত্র ১২ কিলোমিটার। অন্যান্য দেশ যেখানে ৩০০-৪০০ কিলোমিটার রেন্জের সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল (SAM) ব্যবহার করে সেখানে বাংলাদেশ পরে আছে ১২ কিলোমিটারের মাঝে!
এই মিসাইলগুলো যখন কেনা হয়েছিলো তখন সবাই আনন্দিত হয়েছিলো এই ভেবে যে, যাক শুরুটা অন্তত হলো। আগামিতে আরো ভালো ও দুরপাল্লার SAM যুক্ত হবে। কিন্তু এরপর অনেকগুলো বছর কেটে গেলেও কোন উন্নত ভালো SAM যুক্ত হয়নি। অবস্থা দেখে মনে হয় এগুলো দিয়েই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী যুগের পর যুগ পার করে দিবে।
এখানে মূলত বিমান বাহিনীর করুন দশা খুব সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে তবে অন্যান্য বাহিনির অবস্থাও করুন।
মায়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে বাংলাদেশের দেড়গুন ট্যাংক রয়েছে, রয়েছে অধিক সংখ্যক মাল্টিপল রকেট লন্চার ও আর্টিলারি। এছাড়া তাদের রয়েছে ৩০ টি দুরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল! বাংলাদেশের একটিও নেই।
মায়ানমার নৌবাহিনী যেখানে নিজেরা ফ্রিগেট (৩য় শক্তিশালী ধরনের যুদ্ধজাহাজ) বানিয়েও চুপ করে বসে আছে সেখানে আমরা পেট্রোল বোট বানিয়েই এমন গর্ব করে বেড়াচ্ছি যেন খুব বিরাট কিছু করে ফেলেছি!
বাংলাদেশ শুধু একটি দিক থেকেই মায়ানমারের চাইতে এগিয়ে আছে, সেটি হলো সাবমেরিন। বাংলাদেশের হাতে রয়েছে দুইটি সাবমেরিন আর মায়ানমারের কাছে রয়েছে ১টি।
যদিও এই সাবমেরিন দুটিও তেমন আধুনিক বা শক্তিশালী নয় তবে মায়ানমারের জন্য আপাতত যথেস্ট।
এছাড়া শক্তির বিচারে সব দিক থেকেই বাংলাদেশ মায়ানমারের চাইতে পিছিয়ে আছে।
এমনকি বর্তমানে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এতটাই অর্থব বাহিনীতে পরিনত হয়েছে যে আক্রমন প্রতিরোধ ও পাল্টা আক্রমনতো দুরে থাক। কে, কখন, কিভাবে আক্রমন করেছে সেটিও তারা বলার যোগ্যতা রাখেনা!
সাম্প্রতিক সময়ে মায়ানমারের এট্যাক হেলিকাপ্টার বাংলাদেশের আকাশসীমা লংঘন ও মায়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের ভিতরে মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনার মাধ্যমে বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে।
মায়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপ এবং হেলিকাপ্টারের আকাশ সীমা লংঘনের ঘটনাগুলো লক্ষ্য করেছেন কি?
দুইটি ঘটনাই স্থানিয় জনগন সামরিক বাহিনিকে জানিয়েছে!
আবারো লক্ষ্য করুন, স্থানিয় জনগন সামরিক বাহিনিকে জানিয়েছে।
এধরনের বিষয়গুলো জনগন দেখে সামরিক বাহিনিকে জানাতে হবে কেন? এসব বিষয় নজরদারি করা তো জনগনের কাজ নয়। রাডার কই ছিলো? বিজিবি কই ছিলো? আর্মি কই ছিলো?
তারমানে কি তারা এসব নজরদারি করেনা? তাহলে তাদের কাজ কি? স্থানিয় জনগন না দেখলে কে কখন এসে দেশের ভিতরে হামলা করে যায় তা বাংলাদেশের সামরিক বাহিন জানেও না, প্রতিরোধতো বহু দুরের কথা।
কিছুদিন আগে ভারতের একটি সাবমেরিন পাকিস্তানের জলসীমায় প্রবেশ করলে পাকিস্তানের বিমানবাহিনি সেটিকে শনাক্ত করে ফেলে এবং আক্রমনের হুমকি দেয়। পরে ভারতের সাবমেরিনটি পাকিস্তানের জলসীমার বাইরে পালিয়ে যায়! এর আগেও আরেকবার এমন ঘটনা ঘটেছিলো। সেবারও ভারতের সাবমেরিন পাকিস্তানের জলসীমায় প্রবেশ করলে পাকিস্তান সেটিকে শনাক্তা করে ফলে ও ওয়ার্নিং মেসেজ পাঠালে সেটি পালিয়ে যায়!
ভাবুনতো জনমানবহীন মাঝ সমুদ্রে পানির নিচে লুকিয়ে থাকা একটি সাবমেরিনকেও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ধরে ফেলতে পারে। আর আমাদের বাহিনীগুলো দিন-দুপুরে গ্রামের উপর প্রকাশ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা মায়ানমারের হেলিকাপ্টার উরে বেড়ালেও জানতেই পারেনা। স্থানিয় জনগন তাদের খবর দেয়ার পর তারা জানতে পারে!
এরপর শতশত সাক্ষি, ছবি ও ভিডিও থাকার পরও তারা এ ঘটনা যাচাই-বাছাই করে সত্যতা নিশ্চিত হয়!
কতটা অথর্ব বাহিনী ভাবা যায়!
এখন বলুনতো পাকিস্তান কি বাংলাদেশের চাইতে উন্নত? তারা যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশ কি সেসব ব্যবহার করতে জানেনা?
তাহলে পাকিস্তান মাঝ সাগরে পানির নীচে থাকা ভারতের সাবমেরিন শনাক্ত করতে পারলে বাংলাদেশ কেন খোলা আকাশে থাকা হেলিকাপ্টার শনাক্ত করতে পারেনা? সাবমেরিন শনাক্ত করার চাইতে হেলিকাপ্টার শনাক্ত করাতো হাজার গুন সহজ। এই সহজ কাজটাও বাংলাদেশের বাহিনী করতে পারেনা। আর আমরা তাদের নিয়ে কত গর্ব করি!
ভোগ, বিলাস ও দূর্নীতিতে মগ্ন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সৈনিক ও কর্মকর্তারা যে যুদ্ধ লাগলে চাকরি ছেড়ে পালাবেনা তার নিশ্চয়তা কি?
রাইফেল নিয়ে কিছুটা দৌড়-ঝাপ, বাঁশের উপর দিয়ে লাফ আর দড়ি বেয়ে উপরে উঠার ভিডিও দেখিয়ে হয়তো সাধারন জনগনের কাছে বলা যাবে যে, আমাদের ট্রেনিং খুব কঠোর, আমরা খুব শক্তিশালী। তবে যারা সামরিক বিষয়গুলো বোঝেন তারা জানেন যে শুধু এসবে কিছুই হবেনা।
মনে রাখতে হবে, বর্তমানের যুদ্ধ পিস্তল, রাইফেল, গ্রেনেড আর মর্টারের যুদ্ধ নয়। বর্তমানের যুদ্ধ মিসাইল, ড্রোন, স্টিলথ ফাইটার প্লেন, ইলেকট্রিক ওয়ারফেয়ার আর সাবমেরিনের যুদ্ধ।
এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
একসময় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী মায়ানমারের চাইতে এগিয়ে থাকলেও বর্তমানে অতিরিক্ত আত্বতুষ্টিতে ভুগে তারা পিছিয়ে পরেছে।
ফেসবুক বা ইউটিউব ভিডিওতে বাংলাদেশ মায়ানমারের চাইতে এগিয়ে থাকলেও বাস্তবে বহুগুন পিছিয়ে রয়েছে।
এছাড়া বর্তমানে সামরিক বাহিনীগুলোতে সামরিক কাজের চর্চা বাদ দিয়ে অতিরিক্ত পরিমান সংস্কৃতি চর্চা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।
তবে এখনও সময় আছে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার। সঠিক পদক্ষেপ নিলে মাত্র ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারবে।
সামরিক বাহিনীতে যারা চাকরি করেন তারা হয়তো আমার লেখাটি পড়ে রাগ করতে পারেন। কারন আমি সামরিক বাহিনীকে অথর্ব বলেছি। তবে আমার ভালোবাসার সামরিক বাহিনির অধপতন দেখে সত্য কথাটা না বলে পারলাম না
বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর দ্রুত আরোগ্য ও উন্নতি কামনা করছি।