Home » মিষ্টি প্রেমের গল্প (৩টি গল্প একত্রে)
নিবন্ধ

মিষ্টি প্রেমের গল্প (৩টি গল্প একত্রে)

এখানে আমরা আপনাদের জন্য ৩টি ব্যতিক্রমধর্মী খুবই রোমান্টিক মিষ্টি প্রেমের গল্প তুলে ধরেছি । অল্প কিছুক্ষন সময় দিয়ে গল্পগুলো পড়ুন আর নিজেকে তাদের জায়গায় ভেবে দেখুন । আশা করি অবশ্যই ভালো লাগবে ।

মাদ্রাসা ছাত্রীর সাথে মিষ্টি প্রেমের গল্প

আজ আমার বিয়ের প্রথম রাত। ভিতরে অজানা একটা ভয় কাজ করছে। কেন করছে সেটা জানি না। হাত পা কাঁপছে, ঘাম দিয়ে ভিতরে একটু অস্বস্তিকর অনুভব করছি। বিয়ের প্রথম রাত বলেই কথা। নতুন একটা মানুষের কাছে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করাই একজন আদর্শ পুরুষের নিদর্শন। মেয়েটার সাথে কি থেকে কি করব, কিভাবে কথা বলব, কি ই বা বলব, এটাই সন্ধ্যার পর থেকে আমাকে সবচেয়ে বেশি বিচলিত করে ফেলছে। এই নিয়ে কারো কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারছি না, ঠাট্টা করতে পারে।

ঠিক এই মুহূর্তে বারান্দায় হাঁটা হাঁটি করছি আর ভাবছি ভিতরে গিয়ে মেয়েটার সামনে কিভাবে নিজেকে দাঁড় করাবো, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে আমার মধ্যে এক চিমটি নরক ঢেলে দিচ্ছে আর সেটা আমাকে যত সময় যাচ্ছে তত খুটে খুটে খাচ্ছে। বেশ আগ্রহ নিয়ে বিয়েটা করেছিলাম অথচ এখন দেখি উল্টো লজ্জা আমার মধ্যে চেপে বসে আছে। ভিতরে যাব যাব বলে অনেক্ষণ হলো কিন্তু যাওয়া হচ্ছে না। অবশ্য আমি একটু লাজুক টাইপের ছেলে এটা বলা যায়। খুব সম্ভবত এজন্যই মেয়েটার কাছে যেতে লজ্জা লাগছে। চলুন তবে আমার গল্পটা শুরু থেকে আপনাদের শোনাই ।

ওর নাম আরিশা।
মায়ের মুখ থেকে যতদূর শুনলাম মেয়েটা দেখতে চাঁদের মতো, মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে । অত্যন্ত পর্দাশীল। সত্যি বলতে আমি এখনো আরিশাকে দেখিনি, না দেখেই বিয়েটা করেছিলাম। দেখতে কেমন, গায়ের রঙ কেমন সব কিছু আমার চোখের আড়ালে। শুধু আমার মা আর ছোট বোন তৃপ্তির মুখে এতটুকুই শোনেছি মেয়েটা দেখতে যথেষ্ট সুন্দর। তাই না দেখে বিয়েটা করেছি।

ওকে না দেখে বিয়ে করার পিছনেও অবশ্য একটা কারণ আছে। যেই দিন আরিশাকে ওদের বাড়িতে দেখতে যাই সেই দিন আরিশা আমার সামনে আসেনি। ওদের ড্রয়িংরুমে আমি আমার বোন তৃপ্তি মা বাবা সবাই একসাথে বসেছিলাম আরিশাকে দেখার জন্য। অনেক্ষণ বসে থাকার পর খেয়াল করলাম উনারা আরিশাকে আমাদের সামনে আনছেন না। এক যুগ কাটিয়ে দিতে চাচ্ছে। ব্যাপারটা মোটেও শুভ দৃষ্টি দেখতে পারছি না। কারণটা হলো প্রথমত আমরা আরিশাকে দেখতে গেলাম অথচ তারা আরিশাকে নিয়ে আসছে না, দ্বিতীয়ত বাবা অনেক্ষণ যাবৎ আরিশার বাবার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। এটা আমার কাছে মোটেও ভাল লাগছে না। অনেক আশা নিয়ে আরিশাকে দেখতে আসলাম অথচ তারা আরিশাকে নিয়ে আসা তো দূরের কথা বরং মনে হচ্ছে আরিশার বাবা আমার বাবার সাথে হাসির ফ্যাক্টরি খুলে বসে আছে। তখন ভিতরে একরাশ বিরক্তি কাজ করছিলো। মনে করছে উঠে সোজা বাসার দিকে রওনা হই । এতো বিরক্তিকর অপেক্ষা জিনিসটা সেটা ওই দিনেই বুঝলাম।
আমি তৃপ্তিকে ইশারা দিয়ে বললাম, কি হচ্ছে এই সব?
তৃপ্তি মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল, আমিও বুঝতেছি না।

এমন সময় আরিশার মা পর্দার আড়াল থেকে আমার মাকে ডেকে ভিতরে নিয়ে গেল তারপর বলল, “আরিশা তো আপনার ছেলের সামনে বিয়ের আগে দেখা করতে চাইছে না। বলছে আপনার যদি পছন্দ হয় তাহলে ছেলেকে গিয়ে মেয়ে পছন্দ হয়েছে এটা বলতে।
— তার মানে আরিশা বলতে চাচ্ছে আমার মতই ছেলের মত তাই তো ? (আমার মা)
— হ্যা হ্যা এটাই। (আরিশার মা)
মা কথা না বাড়িয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, — আচ্ছা ঠিক আছে। কই আপনার মেয়ে আমাকে দেখান…!

তারপর উনি মাকে আরিশার রুমে নিয়ে গেলেন। আরিশাকে দেখেই মায়ের ভীষণ পছন্দ হলো এবং সাথে সাথে ডিচাইড করল যেভাবেই হোক আরিশার সাথে আমার বিয়ে দিবেন৷ মা আরিশার সাথে অনেক্ষণ কথা বলে ড্রয়িং রুমে ফিরে এসে তৃপ্তিকে বলল, যা ভিতরে গিয়ে তোর হবু ভাবীকে দেখে আয়। তৃপ্তি আমার পাশ থেকে উঠে ভিতরে চলে গেল। মায়ের মুখে এমন কথা শোনে রীতিমতো হতবাগ হয়ে গেলাম। মায়ের কথা শোনে বুঝলাম মেয়েকে বোধয় এখানে আনবে না।

মা আমার পাশে বসল।
আমি মাকে আস্তে করে বললাম,
— মেয়েকে এখানে আনবে নাহ.!
মা মুচকি হেঁসে বলল,
–নাহ মেয়েকে তুই দেখতে পারবি না। মেয়ে একটু পর্দাশীল।
তাই আমি দেখে আসলাম।
— মানে কি তার মানে আমি ওকে দেখব না ?
মা আমার পিঠে হাত রেখে বলল,
— আস্তে বল ওরা কেউ শোনবে। মেয়ে দেখতে চাঁদের মতো। ও তোর সাথে বিয়ের আগে দেখা করতে চাইছে না।
— কি বলছো এটা কোন কথা হলো।
— বাবা তুই কিছু মনে করিস না। তুই আমার উপর বিশ্বাস রাখ মেয়ে যথেষ্ট সুন্দর। আমি এই মেয়ের সাথেই তোর বিয়ে দিব।

মায়ের এতো আগ্রহ দেখে বুঝতে পারলাম মেয়ে দেখতো শুনতে খারাপ হবে না। ভালই হবে মনে হয়। এজন্য আমি আর কিছু বলিনি। সব মা ই ছেলের ভালো চায় খারাপ চায় না।
কিছুক্ষণ পর তৃপ্তি আরিশাকে দেখে আসল। আসার সময় লক্ষ্য করলাম তৃপ্তির মুখে মৃদু হাসি আর চোখ গুলো বড়সড় করে মায়ের পাশে এসে বসল৷ মা তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে বলল, কিরে দেখে আসলি।
তৃপ্তি আনন্দের সাথে বলল, হুম দেখেছি।
ভাইয়া শোন ভাবীকে দেখে আমার পছন্দ হয়েছে। তোর সাথে বেশ মানাবে৷
আমি মুচকি হেসে বললাম, সত্যি তো ?
— হুম সত্যি ভাবী চোখে পড়ার মতো।
মা কিছু না বলেই হঠাৎ করে আমার পাশ থেকে ওঠে আবার আরিশার ঘরে গেল। তারপর ওর গালে হাত রেখে জিজ্ঞাস করল,
— আচ্ছা মা আরিশা। আমার ছেলে দেখতে কেমন তোমার এটা জানতে ইচ্ছে করে না।
আরিশা একটু হাসি দিয়ে বলল, যে ছেলে নিজের মায়ের মুখের কথা শোনে আমাকে নিঃসন্দেহে বিয়ে করতে পারবে সেই ছেলে আর যাই হোক মনের দিকটা খারাপ হতে পারে না।

মা আরিশা মুখে এমন উওর শোনে মোটামুটি বিস্মিত হয়ে গেলেন। এই মেয়ে কেমন মা সেটা আন্দাজ করতে পারছে। অতঃপর মা আরিশার কাছ থেকে চলে এসে ওর বাবার সাথে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে চলে আসে। তার এক সপ্তাহের মাথায় আজ আমাদের বিয়েটা হয়। এক কথায় আমি উদ্দীপনার সাথে বিয়েটা শেষ করলাম।

যাইহোক, এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। রাত এগারোটা বাজে বারটার মুখোমুখি। ভিতরের লজ্জা মিশ্রিত ভয়টা এখনো কাটেনি। এবার বুকে যতটা পেরেছি সাহস জোগাড় করে রুমের দিকে রওনা হলাম। অমনি দেখি তৃপ্তি আমাদের রুম থেকে বাহির হলো হয়তো আরিশার সাথে আমার গীবত গাইছে আর কিচ্ছু না।
— কিরে ভাইয়া তুই এখনো বারান্দায় ঘুরঘুর করছিস ? লজ্জা লাগে তাই না…..!!!
— কিসের লজ্জা। এখানে লজ্জার কি আছে। এমনি হাঁটাহাঁটি করছি সবাই ঘুমিয়ে পড়ুক তারপর যাব।
— ভাইয়া অলরেডি সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি তোকে ভাল করেই চিনি তুই কেমন। আমার কাছে কিছু লুকিয়ে লাভ নেই তোর মুখের দিকে তাকালেই বুঝা যায় তুই যে লজ্জায় বিভোর হয়ে আছিস।
— হু তুই সব জানিস, তুই তো গণক। যা এবার ঘুমাতে যা!!
— যাচ্ছি। আর ঘুরাঘুরি করিস না এবার যা। ভাবী তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

তৃপ্তি যাওয়ার পর আমি ধীরে ধীরে রুমের দিকে পা বাড়ালাম । দেখি আরিশা বউ সাজে খুপরি মেরে বসে আছে। মাথায় ঘোমটা শুধু হাত গুলো দেখে যাচ্ছে। মেহেদীর সাজে হাত দুটো অন্যরকম লাগছে।
আমি আসতে করে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। বুকে হার্টবিট কেবল বেড়েই যাচ্ছে। অনেক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম আমিও কিছু বলছি না আরিশও কিছু বলছে না।
এমন সময় আরিশা আস্তে করে বলল,
— আপনি কথা বলছেন না কেন ?
এই প্রথম আরিশার কথা শোনলাম। অসম্ভব সুন্দর ওর কন্ঠ। আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
— কেমন আছেন।
আরিশা একটু হাসি দিয়ে বলল,
— হুম ভাল আছি….আপনি ?
— হ্যা ভালো।
— আমার কাছে আসতে এতো দেরী করলেন কেনো ?
— হাতে একটু কাজ ছিলো তাই একটু দেরী হলো ।
— নাকি আমার কাছে আসতে লজ্জা লাগছে।
— না তেমন কিছু না।
— ওও তবে তৃপ্তি বলেছে আপনি নাকি ভীতুর ডিম।
— হি হি হি তৃপ্তি এটাও বলেছে আপনাকে।
— বলবে না আপনি আসতে লেট করছেন তাই তৃপ্তিকে আপনার সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলাম।
— তা তৃপ্তি আমার নামে আর কি কি বানিয়ে বললো ?
আরিশা একটু রেগে গিয়ে বলল,
— এতো কিছু বলতে পারব না, আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে না, আপনি এতো কথা বলেন কেনো ? আমাকে না দেখে বিয়ে করলেন এখন বিয়ের পরেও দেখবেন না। কেমন পুরুষ আপনি ?
— হুম.. দেখতো তো চাই, বলতে সাহস পাচ্ছি না…..!!
— আমি আপনার বউ আমাকে দেখতে আবার সাহস লাগে নাকি ??
— তবুও আমার ভিতরে কেমন যেন ভয় লাগছে।

আচমকা আরিশা ওর মাথার উপর থেকে কাপড়টা সরিয়ে নিলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে নিয়ে চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছি না। এতো সুন্দর আমার বউ। একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
— আপনাকে একটা কথা বলব। ( আরিশা)
— জ্বি বলুন।
— আমি ছোট থেকে পর্দার আড়ালে বড় হয়েছি। কোন বেগানা পুরুষের স্পর্শ আমার শরীরে লাগতে দেইনি এমনকি সাধারনত কথাও বলতামনা। আপনি প্রথম…!
আমি আসলে সব মিলিয়ে প্রিপেয়ার না। তাই আপনি যদি আমাকে কয়েকটা দিন সময় দেন তাহলে ভাল হয়। তবে এর আগে আপনি আমাকে স্পর্শ করতে পারবেন না। আমি নিজ থেকেই আপনাকে বলব।

আরিশার মুখে এমন কথা শোনে যতটুকু বুঝলাম। নতুন পরিবেশে পা রাখছে নতুন জীবন নিয়ে তাই হয়তো ডিসকম্ফরটেবল ফীল করছে। কয়েকদিন গেলেই ঠিক হয়ে যাবে। এজন্য ওর কথায় সম্মতি জানলাম।
— আচ্ছা আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেই ভাবে চলব। আপনি বললার আগ পর্যন্ত আমি আপনাকে স্পর্শ করব না।
— আমি জানি এই রাতটা একজন পুরুষের কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ একটা রাত। বিয়ের প্রথম তার বলেই কথা। কিন্তু আমি সত্যি বলছি আমি একদম প্রস্তুত না । আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
— আরে না কি বলছেন। আমি নিজেও প্রস্তুত না। আমি কিছু মনে করিনি।
— গায়ের পাঞ্জাবিটা এখনো খোলেননি কেন….!!!
অনেক রাত হয়েছে আমার খুব ক্লান্ত লাগছে। যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি একটু ঘুমাব।
— আচ্ছা আপনি ঘুমিয়ে পড়েন। আমি গেঞ্জি গায়ে দিয়ে নিচে ঘুমি পড়ব।
— ছিঃ ছিঃ আপনি নিচে ঘুমবেন কেন ? আমার সাথেই ঘুমাবেন।
এটা বলেই আরিশা শুয়ে পড়ল। চোখে মুখে ক্লান্তির চাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
হাত মুখ ধুয়ে গেঞ্জি গায়ে দিয়ে এসে দেখি আরিশা ঘুমিয়ে পড়েছে । আমিও ওর পাশে শুয়ে পড়লাম আর এক দৃষ্টিতে ওর তাকিয়ে রইলাম। আমার ভিতরে তখন কি রকম অনুভূতি কাজ করছে বলে বুঝাতে পারব না। তার কিছুক্ষণ পর আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।

হঠাৎ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দের ঘুমটা ভাঙ্গল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি তিনটা পনের। পাশে আরিশা নেই। বালিশ থেকে মাথা উঠানো মাত্রই দেখি আরিশা তাহাজ্জুদতের নামাজ পড়ছে আর খুব কান্না করছে। এতো ভাল একটা মেয়ের সাথে আমি সংসার করব ভাবতেই অবাক লাগছে। এই ফাঁকে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ফজরের আযানের সাথে সাথে উঠে গেলাম নামাজ পড়ার জন্য । খেয়াল করে দেখলাম আরিশা এখনো নামাজের বিছানায় বসে আছে। বুঝতে দেরী রইলা না আরশি আর ঘুমায়নি। এতোক্ষণ নামাজের বিছানায় কাটিয়ে দিল। আমি অজু করে এসে আরিশার পাশে দাঁড়ালাম। ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, — সব সময় পড়েন ?
— হুম আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি।
— আলহামদুলিল্লাহ । তাহলে জান্নাতের আশা করতে পারি তো ?
ওর মুখে এমন প্রশ্ন শোনে অবাক হয়ে মাথা নাড়িয়ে, হ্যা সূচক উওর দিলাম। এরপর এক সাথে নামাজ পড়ে শুয়ে পড়লাম।

— এই যে শুনছেন বেলা হয়েছে আর কত ঘুমোবেন ?
চোখ খুলে দেখি আরিশা। কাল রাত ওকে যতটুকু দেখেছি আজ দিনের আলোতে আরো ভাল করে দেখতে পারছি। মায়া মায়া চেয়ারা জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে ৷ কিন্তু আরিশার বারণ করছে। আর আমিতো কথা দিয়েছি, ও বলার আগ পর্যন্ত আমি ওকে স্পর্শ করবো না।
— অমন করে তাকিয়ে আছেন কেনো…!! এবার উঠুন। এটা বলেই আরিশা একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়। উঠে দেখি সবাই নাস্তা করছে, আমিও ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে বসলাম।

আরিশা আমার সামনে বসে ছিলো। ওর প্রতি আমি সত্যিই দূর্বল হয়ে পড়ছি। খাওয়ার সময় অনেকবার আড় চোখে তাকালাম। যতো দেখছি ততই ভালো লাগছে। হঠাৎ তৃপ্তি বলে উঠল আর কত দেখবি। ওর এমন কথা শোনে আমি হকচকিয়ে প্রথমে ওর দিকে তাকালাম তারপর আরিশার দিকে তাকালাম দেখি আরিশা মুচকি মুচকি হাসছে। তার মানে আমি যে আরিশার দিকে তাকালাম তৃপ্তির কথা শোনে সে বুঝতে পেরেছে । বাবা মা টের পায়নি বিষয়টা। মনে করছে তৃপ্তিকে ভাল দেখে একটা চড় মারি। সারাক্ষণ আমার পিছু পিছু পড়ে থাকে। বাসায় ছোট বোন থাকলে এটাই একটা বিরাট সমস্যা। যা করি সাবধানতার সাথেই করি। তবুও ওর চোখে ধরা দিতেই হয়। নাস্তা করে রুমে চলে আসলাম। বিয়ের জন্য অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছিলাম এখনো তিনদিন বাকি। ভেবেছিলাম আরিশাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাব। কিন্তু ও যেতে চাইবে না কারণ আরিশা ঘুরাঘুরি চেয়ে পর্দার আড়ালে থাকতে বেশি পছন্দ করে। তবুও একবার জিজ্ঞাস করলাম। নাহ..!! যেমনটা ভেবেছিলাম ও যেতে চাচ্ছে না।

এর মধ্যে তিনদিন পার হয়ে গেল। এখন থেকে রীতিমতো অফিসে যেতে হচ্ছে সকাল নয়টার দিকে বাসা থেকে বাহির হই ফিরতে ফিরতে রাত আটটা পার হয়। ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটছে। আরিশকে ঠিক মতো সময় দিতে পারছি না। মেয়েটা দিন দিন আমার রক্তের সাথে মিশে যাচ্ছে অথচ তাকে স্পর্শ করতে পারছি না। ওর সুন্দর ব্যবহারের জন্য পরিবারের সবাই তাকে বড্ড বেশি ভালবাসে। রাতে সবাই এক সাথে খেতে বসলাম আরিশা আমার সামনের চেয়ারে। খাওয়ার সময় হঠাৎ করে নিচ দিয়ে আমার পায়ে কে যেন চিমটি কাটল। আমার পুরো শরীরে শিহরণ দিয়ে অন্য রকম একটা স্পর্শানুভূতি পেলাম। বেশ ভালই লেগেছিলো। আমি নিশ্চিত ছিলাম এটা আরিশা ছিল। কারণ এমন কিছু ও ছাড়া আর কেউ করবে না। আমি আড়চোখে ওর দিকে তাকালাম দেখি ও মুচকি মুচকি হাসছে। মাথায় ওড়না সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে। রাতে খাওয়ার পর আমি নিজের বেডের উপর বসে বসে মোবাইলে নোটিফিকেশন দেখছি। কিছুক্ষণ পর আরিশা হাতের কাজ সেরে রুমে চলে আসল।
ওর চোখে মুখে খুশির চাপ। আমার পাশে এসে বসল।
— আপনাকে একটা কথা বলব ! ( আরিশা)
— হুম বলুন।
— না থাক …!!!
— কি বলবেন বলুন। আমি কিছু মনে করব না।
— না আজ থাক পরে বলব।
আমি আর জোর করিনি । যথারীতি সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছিলাম অমিত আরিশা এসে আমার পিছনে দাঁড়ালো।
— কিছু বলবেন। ( আমি)
— হুম।
আমি ওর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললাম,
— শুনি আমার বউ কি বলতে চায়।
— আপনি কিছু বুঝেন না আমি কি বলতে চাচ্ছি।
— না আমি বুঝি না আপনি বলুন।
— আপনি চাইলে এখন থেকে আমাকে স্পর্শ করতে পারবেন।
এটা শোনার পর আমার কি যে ভাল লাগছে বলে বুঝাতে পারব নাহ। এর পর আরিশাকে বললাম,
— এই দিকে আসুন।
আরিশা টিপটিপ করে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো তার পর আমি আলতো করে ওর গালে হাত দিয়ে কপালে একটা চুমু দিলাম। দেওয়ার সময় আরিশা পুরো শরীর একটা ঝাঁকুনি দিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি বুঝতে পারলাম এই মেয়ে সত্যিই পবিত্র একটা মেয়ে। এর শরীরে কোন কলঙ্কের দাগ নেই। আমি ওকে কখনোই কষ্ট দিব না, কখনোই না একে বারেই না।

স্নিগ্ধা আর আমি

-ওগো বউ শোনছো ?
-আরেকটা বার যদি এইসব ওগো বলে ডাকিস তাহলে তোকে এই ছুরিটা দিয়েই খুন করবো।

আমার মিষ্টি প্রেমের গল্প একটু ভিন্ন । গতকাল ৭ মাস হলো স্নিগ্ধার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে কিন্তু এখনো কোন ফুলশয্যা হয় নি। ফুলশয্যা তো দূরের কথা, শান্তিতে একটু শয্যাও হয়নি। দেখলেন না একটু ভালবেসে ডাক দিলেই তেলে বেগুলে জ্বলে উঠছে। বিয়ের প্রথম রাত থেকে আমাকে সোফায় ঘুমাতে হচ্ছে। চলেন একটু ফ্ল্যাশব্যাক থেকে ঘুরে আসা যাক।

বিয়ের সব কাজ সম্পূর্ণ করে যথারীতি আজ আমাদের বাসর রাত। আমি রুমে ডুকে দরজাটা বন্ধ করে স্নিগ্ধার কাছে গেলাম। ওকে কিছু বলার আগে আমি বই নিয়ে ওর সামনে বসলাম। প্রায় ৩০ মিনিট ওর সামনে বইটা নিয়ে আমি পড়লাম। ও চুপচাপ বসেই রইলো। তারপর আমি বললাম,
— রাত না জেগে ঘুমিয়ে পড়ো। আজ আমি ‘দত্তা’ গল্পটা সম্পূর্ণ শেষ করে ঘুমাবো।

আমার কথায় কিছু না বললেও একটা অজানা লুকে তাকালো। আমি এতে বিচলিত না হয়ে আবার গল্প পড়ায় মনোযোগ দিলাম। তখন স্নিগ্ধা খাট থেকে নেমে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় আমার শরীরের সাথে স্পর্শ হলো। আমি মুহূর্তেই ওর হাতটা সরিয়ে দিলাম।
— কি হলো? আপনাকে ধরলে কি হলো?
— মেয়েদের স্পর্শ আমার পছন্দ না। (মাথাটা নিচু করে)
— মানে?
— কিছু না। তুমি ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পরো।
— হুম।
ও ফ্রেশ হয়ে এসে আমার পাশে বসলো তবে স্পর্শ করলো না। পরে বলল…
— মেয়েদের স্পর্শে আপনার সমস্যা কেন? আগে কি কারো সাথে রিলেশন ছিল?
— না আমি কোন মেয়ের সাথেই চলাচল করি না। আমার তো ছেলে ভাল লাগে।
— মানে??(শকড)
–( আমি চুপ হয়ে রইলাম)
— মানে আপনি একটা “গে” ?
আমি চুপচাপ বসে রইলাম। সিগ্ধা যা ইচ্ছা বলতে লাগলো। এটাই স্বাভাবিক। যদি কোন মেয়ে বাসরঘরে প্রথম শুনে তার স্বামী মেয়েদের নয় বরং ছেলেদের প্রতি দুর্বল তাহলে সেটা মানসিক চাপের সৃষ্টির কারন। সিগ্ধা কেঁদে দিয়েছে। আর বলতে লাগলো…
— আপনাকে দেখে প্রথমেই আমার ভাল লেগেছে। আপনার বডি, চেহারা কোনটায় মেয়েলী স্বভাব নেই কিন্তু আপনি সেই ছিঃ। আমি পারবো না আপনার মত ছেলের সাথে জীবন পার করতে। বিয়ের আগে আপনার সাথে আমার কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল। এখন তো আপনার থেকেও নিজের উপর বেশি রাগ হচ্ছে। আপনি আমার সামনে থাকবেন না। যান ওই সোফায় গিয়ে ঘুমান। আমার জীবনটা নষ্ট করে দিতে একটা বার কি নিজের কাছে খারাপ লাগেনি। আর কোন দিন আপনি আমার কাছে আসবেন না। সব সময় সোফায় থাকবেন। বিড়াল কোথাকার।।

এই হলো আমার বিয়ের রাতের প্রথম গল্প। সেইদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের মাঝে অনেক দূরত্ব। যদি আমি সব সময় ওরে ভালবেসে ওগো বউ বলে ডাকি তবে ও আমাকে “তুই” বলেই ডাকে। যাক গে, বউ মানুষ একটু রাগ করবে এটাই স্বাভাবিক।

কিছুদিন পর স্নিগ্ধার ছোট ভাইয়ের বিয়েতে স্নিগ্ধাকে নিয়ে ওদের বাসায় গেলাম। বাসার সবার সাথে আমার সম্পর্ক অনেক রসালো কিন্তু স্নিগ্ধার চোখে আমি বিষ। হঠাৎ এক সময় দেখলাম স্নিগ্ধা ওর এক বোনের সাথে কেদেঁ কেদেঁ কথা বলছে। আমি রুমে ডুকতেই ও চোখ মুছে ফেলে। তখন ওর বোন আমাকে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে। যা বুঝলাম তা হলো আমাকে নিয়েই স্নিগ্ধা যা বলার বলছে। তাতে আমার কিছুই যায় আসে না।

বিয়েতে কতটুকু মজা হয়েছিল জানি না তবে আমি মজা করলেও স্নিগ্ধা মন মরাই ছিল। বিয়ের কাজ শেষ করে স্নিগ্ধাকে নিয়ে আমি আবার বাসায় ফিরে আসি। রাতে খাটে বসে বই পড়ছিলাম তখন স্নিগ্ধা বলল…
— খাট থেকে যা। আমি এখন ঘুমাবো।
— সিগ্ধা আমি তোমার স্বামী আর তোমার থেকে বয়সেও বড় আমাকে তুই করে বলতে খারাপ লাগে না।
— খারাপ! ফানি কথা তাই না। তোকে তুই করে বলা উচিত।
— দেখো স্নিগ্ধা এইসব ঠিক হচ্ছে না কিন্তু?
— তুই আমার সাথে কি এমন ঠিক করেছিস বলতে পারিস? ৩ মাসের উপর হয়ে গেল বিয়ে হয়েছে। এর মাঝে একবারও তুই আমায় ছুঁয়ে দেখেছিস। যখন আমাদের বিয়ের ১ বছর পার হবে আর সবাই আঙ্গুল তুলবে ঘরে নতুন সদস্য নেই কেন? তখন তো সবাই আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলবে আমি বন্ধ্যা।
–স্নিগ্ধা ( চড় বসিয়ে দিলাম)
স্নিগ্ধা কেঁদে চলেছে। আমার এখন কি করা উচিত বুঝতে পারছি না। তখন স্নিগ্ধা আবার বলতে লাগলো।
— এই একটু আধটু না মেরে, পারলে একেবারে মেরে ফেললেই তো পারিস। সব ঝামেলা মিটে যায়।

আমি আর কথা না বলে রুমে থেকে বেরিয়ে চলে গেলাম। এখন সব দোষ আমার দিকে আছে। আসলে স্নিগ্ধা যা ভাবছে তা নয়। কিন্তু আমি স্নিগ্ধাকে বুঝাতে পারছি না। আমারও ইচ্ছা করে স্নিগ্ধার কাছে যেতে তবে আমি তো প্রতিজ্ঞা বদ্ধ, যত দিন না স্নিগ্ধা ওর ফুফাতো ভাইয়েই কাছে সরি বলছে ততদিন আমি ওর কাছে যাবো না।

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে ছাদে দেখে অবাক হলাম। সারা রাত ছাদেই ঘুমিয়েছি কিন্তু স্নিগ্ধা একবারের জন্য আসলো না। যাই হোক,আমি রুমে গিয়ে দেখি স্নিগ্ধা এখনো ঘুমাচ্ছে। আমি ওর পাশে বসে ওরে খুব কাছ থেকে দেখতে লাগলাম। মেয়েটাকে বড্ড মায়বী লাগছে। ইচ্ছে করছে আলতো করে ওর চুল গুলো মুখ থেকে সরিয়ে দেই।
হঠাৎ ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল আর সরে গেল। হয়ত হঠাৎ ভয় পেয়ে গেছে। আমাকে দেখে কোন রকমে কাপড় ঠিক করে নিয়ে বলল…
— কি হয়েছে?
— রেডি হয়ে নাও। আজকে একজনের সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাবো তোমায়।
— কোথায়?
— যেখান থেকে আমাদের গল্পের শুরুটা হয়েছে সেখানে। নাও তারাতারি ফ্রেশ হয়ে নাও।
— হুমম
স্নিগ্ধা একটু অস্বাভাবিক ভাবে বাথরুমে চলে গেল আর আমি রেডি হতে লাগলাম।

একটা পার্কে আমি আর স্নিগ্ধা বসে আছি। তখনই স্নিগ্ধার ফুফাতো ভাইটা আসলো। স্নিগ্ধা ওর ভাইকে দেখে আমার দিকে তাকলো। আমি বললাম…
— তোমরা একটু বসো। আমি তোমাদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি।
— হুম।
আমি ওদের থেকে আড়ালে গিয়ে বসে ওদের কথা শুনতে চাইলাম। আসলে স্নিগ্ধার ফুফাতো ভাই হলো কমন জেন্ডার। যাকে আমরা মজা করে “গে” বলে থাকি। সেটা ওর দোষ নয়, ওর শরীরে জন্মগত মেয়েলী হরমোর বেশি। যেটা সম্পূর্ণ উপরওয়ালার দান। এতে ওর কোন হাত নেই।
এক পর্যায় স্নিগ্ধা বলতে লাগলো।
— রাফি সরি রে ভাই। আসলে তোর সাথে তোর সমস্যা নিয়ে অনেক মজা করতাম। তোকে একবার চরও মেরেছি। পারলে আমায় মাফ করে দিস।
— এসব বলিস নে বোন।
তখন আমি ওদের সামনে গেলাম। স্নিগ্ধা আমাকে দেখা মাত্র চোখ মুছতে লাগলো।
তখন আমি বলতে শুরু করলাম…
— স্নিগ্ধা মনে পড়ছে আমি পরিবারের সাথে যেদিন তোমাকে দেখতে গিয়ে ছিলাম ওইদিনের ঘটনা। ওইদিন আমি তোমাদের বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম তখন ভুলবশত তোমার রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন মনে হয় রাফি তোমার মেকআপ বক্স থেকে কিছু গালে লাগাচ্ছিল তখন তুমি রাফিকে “গে” বলে একটা চড় মারো। আমি তখন আলাদা ভাবে রাফির সাথে কথা বলে জানতে পারি তুমি কমন জেন্ডারদের দেখতে পারো না।

আমার ইচ্ছা ছিল তোমাকে বিয়ে করবো না কিন্তু তখন বাবা মা তোমাকে পছন্দ করে বলে আমি আর না করতে পারি নি। তাই সেদিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা নেই রাফির কাছে তোমাকে মাফ চাওয়াবো আর আজকে সেটা পেরেছি। আমরা সবাই মানুষ। প্রতি টা মানুষের শরীরে কোন না কোন রোগ আছে। তাই বলে সে কি সমাজ থেকে বহির্গত। তেমনি রাফির মত হাজারও ছেলে মেয়েলী হরমোনের স্বীকার। যেটা সাধারন মানুষ খারাপ দৃষ্টিতে নিয়েছে আর হ্যা আমার কোন এই সমস্যাটা নেই। তোমাকে মাফ চাওয়ানোর জন্য তোমার সাথে নাটক করতে হলো। তাই সরি।
আমার কথা শেষ হতেই স্নিগ্ধা আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।
— আমি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছি। আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ। আর কখনো কারো সমস্যা নিয়ে মজা করবো না। সবাইকে সমান চোখে দেখবো।
— কান্নার কিছু হয় নি। নিজের ভুল বুঝতে পারাটাই সব থেকে বড়। তুমি বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক।
এরপর রাফির সাথে নাস্তা করে ওরে বিদায় দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। আজ থেকে আমাদের প্রেমের গল্প ভিন্ন মোড় নিবে।

রক্তকরবী

সকাল থেকেই মেজেজ টা বিগড়ে আছে। বাজার করতে গিয়েছিলাম। দুইদিন পরিবহন ধর্মঘট থাকায় সবকিছুর চড়া দাম। বাজার শেষে পকেটে আর একটা টাকাও রইলো না। উলটো ৬০ টাকা বাকি রেখে এসেছি ডিমের দোকানে।

ফিরে দেখি বাড়িঘর নিস্তব্ধ। রুকু বলল, মা লিলিদের বাড়িতে গেছে। বাবার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে। মা তার ভাইয়ের বাড়ি চলে গেছে। আমার মামার বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ।
আজকে তাহলে রান্না বন্ধ। দুপুরে খাওয়া হবেনা ভেবেই ক্ষুধা আরো বেড়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর পেটে ইঁদুর দৌড়ানো শুরু হয়ে যাবে। এরমধ্যে একটা ব্যাবস্থা করতে হবে। বাবা নিজের ঘরে শুয়ে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে আছে। কী যে সারাদিন ভাবে লোকটা কে জানে! রুকু পড়ছে। আমি বাসা থেকে বের হয়ে এলাম।

সূর্যটা এখন একদম মাথার ওপরে। ছায়াটা কেমন থেঁতলে আছে। আজকাল সব বন্ধুরাই আকার ধারণ করেছে, কেউ বেকার নেই। তাই কার কাছে যাওয়া যায় ভাবছি, এমন সময় আমার পাশ দিয়ে একটা রিকসা কিছুটা সামনে গিয়েই থেমে গেলো।
রিকসায় নিতু আর তার ছোট ভাই সোহেল বসে আছে।
নিতু বলল, আজকের দিনে তোমার সাথে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি।
আমি বললাম, কেনো, আজ কি বিশেষ কোনো দিন?

– অন্য কারো জন্য বিশেষ কি না জানিনা, তবে আমার জন্য অবশ্যই বিশেষ একটা দিন। এই সোহেল নাম তো, তুমি এসো বসো।
সোহেল নামতে চাইল না। নিতু জোর করে সোহেলকে নামিয়ে দিতেই সে বলল, আমি কিন্তু বাসায় গিয়ে সব বলে দিবো!
– আচ্ছা যা, বলে দে গিয়ে যা!
সোহেল দৌঁড়ে চলে গেলো যেদিক দিয়ে রিকসাটা এসেছিলো।
আমি নিতুর পাশে বসতেই অপূর্ব এক সুগন্ধ পেলাম। শ্যাম্পু, পারফিউম বাদে এটা ওর নিজস্ব গায়ের গন্ধ। জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাচ্ছ?
– রূপাদের বাড়িতে।
– ওখানে কী?
– সাজতে।
– তোমার আবার সাজতে হয় না কি? তুমিতো জন্মগত সুন্দরী।
– কী সব যে বলো। এসব বলেই মেয়ে পটাও বুঝি ?
– না, তুমি চলে যাওয়ার পর আর একটাও পটেনি। পৃথিবীতে লাস্ট সরল যে মেয়েটা জন্মেছিলো, সেটা তুমি। তারপর সব মেয়েই গরল নিয়ে জন্মায়।
– বাদ দাও, তুমি কোথায় যাচ্ছিলে?
– কোথাও না। এমনি হাঁটছিলাম।
– তোমার মতো বোহেমিয়ান ছেলেও আজকাল দুর্লভ। সবাই কিছু না কিছু কাজ করছে।
– আমি কাজ করলে যে সেটা আরেকজনের ভাত মারা হবে।
– ওকে বাদ দাও তোমার এই সস্তা ফিলসফি।
– আচ্ছা বাদ দিলাম।
– তুমি কী জানো, এটাই তোমার সাথে আমার শেষ রিকসা ভ্রমণ?
– কেনো, বিদেশ চলে যাচ্ছো নাকি?
– আজকে আমার বিয়ে।
– ও আচ্ছা।
– কী, বিশ্বাস হলো না বুঝি?
– হলো। আমি নেমে যাবো। এই গলিতে ঢুকব।
-রিকসা ওয়ালা ভাই, আপনি থামাবেন না, জোরে চালান।
রিকসা রূপাদের বাসার সামনে এসে থামলো।
নিতুর কাছে এক হাজার টাকার নোট। আমি রিকসা ভাড়া দিলাম। নিতু বলল, তোমার কাছে ভাঙতি হবে?
– না।
– টাকাটা তুমি ইকটু ভাঙিয়ে এনে দাও। তারপর যেখানে খুশি চলে যাও।

আমি ভাঙতি নিয়ে এসে দেখি নিতু নেই। আমি জানি, কাজটা সে ইচ্ছে করেই করেছে। যাতে সে রূপাদের বাসা থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানে থাকি। ধুর, ওর টাকা পরে ফেরত দিয়ে দিবো নে। এটা ভেবে হাঁটা দিলাম। কিছুক্ষণ পর আবার মনে পড়লো, ও যে বলল, আজকে আমাদের শেষ রিকসা ভ্রমণ! তার মানে কী, ইকটু আগে ওর পাশে বসে শেষবারের মতো রিকসায় চড়লাম? আর কখনো ও আমার পাশে বসবে না? বুক টা কেমন শূন্য হয়ে গেলো, শুধু বুক না, পুরো শরীরটাই এমন হালকা হয়ে গেছে যেনো মহাশূন্যে ভাসছি। এমন অনুভূতি হলো কেনো? নিতুর সাথে আমার ব্রেকাপ হয়েছে ৬-৭ মাস হয়ে গেছে। এতোদিনেও তো এমনটা কখনোই লাগেনি। এখন কী সে পুরোপুরি ভাবে চলে যাবে? না, আমি এসব ভাবতে চাই না। আমি আবার রূপাদের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

২ ঘন্টা পর নিতু বের হলো। সাথে রূপা এবং আরো কয়েকজন। নিতু খুব বেশি সেজেছে। এতোটা কড়া সাজে ওকে কখনোই দেখিনি আমি। ওকে চেনাই যাচ্ছে না একদম। অথবা আমিই হয়তো ভুল দেখছি, এটা নিতু না। রূপাদের বাড়ির দোতলায় ওদের নিজেদের পার্লার। আমার আর কিছু বোঝার বাকি রইলো না।
নিতু একটা গাড়িতে এখুনি উঠে যাবে। আমি সামনে এগিয়ে যেতেই মনির আমার কলার চেপে ধরল। বলল, তুই শালা এদিকে আয়।
নিতু দেখেও দেখলো না, গাড়িতে ঢুকে বসে পড়ল। কী নির্লিপ্ত ভঙ্গি! এটা আমার সহ্য হলো না।
মনিরকে আমি ধাক্কা দিয়ে গাড়িটার পাশে এসে দাঁড়ালাম। মনিরও কাছে চলে এসেছে।
নিতু বলল, মনির তুই যা এখান থেকে। তুমি এসো, ভেতরে এসে বসো।
নিতুর ওপর আমার রাগ হচ্ছিলো খুব, অথচ ওর কথায় সম্মোহিতের মতো আমি গাড়িতে ঢুকে ওর পাশে বসলাম।

গাড়ি চলতে শুরু করল। আমি গাড়িতে বসার পরে কেউ কিছু বলল না দেখে আমি খুব অবাক হচ্ছিলাম। কিন্তু ভালো একটা অনুভূতিতে কিছুক্ষণ আগের শূন্য মনটা ভরে গিয়েছিলো।
নিতু বলল, ইদানিং কেউ আমার মুখের ওপর কথা বলে না। কেনো জানো?
– না।
– আমি তাদের একটা কথা পরিপূর্ণভাবে মানছি, তাই তারাও আমার অনেকগুলো কথা মেনে চলছে।
– ও।
আমি জানতে চাইলাম না, কোন কথাটা নিতু মেনে নিয়েছে। আমি জানি, কিন্তু শুনতে চাই না।
নিতু বলল, আমাকে ভালোবাসো?
– হুম্মম, বাসি।
– তাহলে আমার হাত ধরে বসো।
আমি ওর নিথর ঠান্ডা হাতটা ধরে রাখলাম। মনে হয় যেনো, হাতটা অনেকক্ষণ আগেই মরে গেছে।
নিতু বলল, তুমি যেদিন আমাকে ছেড়ে চলে গেলে, সেদিন তোমাকে হারানোর ভয় আমার চলে গেছে। সেদিন আমি প্রথম বুঝতে পারলাম, তোমাকে আমি পেয়ে গেছি।
– মানে?
– ভালোবাসলেই যে ভালোবাসার মানুষকে সারাজীবনের জন্য কাছে পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যারা পেয়ে যায়, তাদের ভালোবাসা ধীরে ধীরে মরে যায়। তারা মানুষটাকে কাছে পায়, ভালোবাসা ভুলে যায়। মানুষটাকে পাওয়া আর ভালোবাসা পাওয়া দুইটা ভিন্ন ব্যাপার।

আমি ওর কথা বুঝতে পারলাম, বাড়িতেই তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ দেখে এসেছি।
নিতু কথা বলেই চলেছে। ওর সব কথা আমার মাথায় ঢুকছেও না। ওর মগজের ভেতর ঢুকতে পারলে ভালো হতো। ঢুকতে চেষ্টা করছি, পারছি না। থট রিডিং ব্যাপারটা মনে হয় পুরাই ভুয়া।

নিতু বলছে, তুমি এবার একটা জব করো। টাকা রোজগার করবে আর প্রেম করবে। ভুলেও কিন্তু বিয়ে করবে না। তুমি প্রেমিক পুরুষ, সংসারী পুরুষ না। আমিতো চলে যাচ্ছি, তবে আমার ছায়া রেখে যাচ্ছি। তোমার অনাগত প্রতিটা প্রেমিকার মাঝে আমার ছায়া খুঁজে পাবে। বিয়ে করলে সেই ছায়াও মরে যাবে।
হটাৎ করে আমি বুঝতে পারলাম, নিতু কথা বলে ঠিক রক্তকরবী’র নন্দিনীর মতো করে। কেমন যেনো সুরের মতো করে একটা কবিতা পড়ছে ও। শুনতে কখনোই ক্লান্তি আসেনা। আসলেই কী এগুলো ওর মনের কথা? না কি মনে অন্যকিছু রয়েছে ওর? ওর আসল কথাটা আমি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। ও কী আত্মহত্যার কথা ভাবছে? নইলে শেষবারের মতো ভ্রমণ, হাতধরা এভাবে বলল কেনো?

ও অনবরত কথা বলছে আর আমি যেনো কোনো কল্পনার জগতে ভেসে যাচ্ছি। আমার পাশে ভেসে যাচ্ছে একটি রক্তকরবী ফুল। ফুলটি একসময় নন্দিনীর আকৃতি ধারণ করলো। আমার কল্পনায় নন্দিনীই নিতু।
নিতু খুব সুন্দর করে সেজেছে। আমি ওর দিকে অপলক তাকিয়ে আছি। চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করছে না। ওর এতো পাশে বসে হাত ধরে আমার কামনা অনুভূত হয়নি, এমন কোনো দিন নেই। রিকসায় বসেও ওর গলা বেয়ে বুকের দিকে নামা বিন্দু বিন্দু ঘামের দিকে তাকিয়ে আমার শরীর শিরশির করেছে। কেবল এখন সব উধাও হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেনো, আমরা দুইজন পৃথিবীর আদিমতম মানব-মানবী। আর কেউ নেই।

আমি বললাম, নিতু তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
নিতু ফিক করে হেসে বলল, থ্যাংকু।
ওর এই হাসিটা আমি অনেকদিন পরে দেখলাম।
তারপর আমরা অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, এই পথ যেনো শেষ না হয়!
নিতু বলল, আমি তোমাকে যেখানে নামতে বলব, সেখানে নেমে যাবে।
আমি কিছু বললাম না।
নিতু তার ব্যাগ থেকে একটা বাটি বের করল। একটা কেক আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিলো। এবার আর ও বলল না, শেষবারের মতো খাইয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমি বুঝে গেলাম, এটাই শেষবার।
নিতু বলল, তুমি তো কেক খেলে, আমার কী খেতে ইচ্ছে করছে জানো?
– কী?
– আমার তোমাকে একটা প্রগাঢ় চুমু খাওয়ার তীব্র ইচ্ছে করছে। কিন্তু লিপস্টিক নষ্ট হয়ে যাবে। থাক, তুমি আমার কপালে একটা চুমু খাও। ওতেই আমার মন তৃপ্ত হবে।
আমি ওর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে চুমু খেলাম।
ও চোখ বুজে আবেশটা অনুভব করল। যে মেয়েটা কথায় কথায় কেঁদে ফেলতো, তার নিজের এমন আবেগকে দমন করতে দেখে খুব অস্বস্তি লাগছিলো। ও কী কান্নাও আঁটকে রেখেছে মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে বলে?
নিতু বলল, তুমি কী আমার বিয়ে খেতে চাও?
আমি কিছু না বলে ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
– হাসবে না বলছি। খেলে বলো, আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো। কে কী ভাবলো আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আর না খেলে এখানেই নেমে যাও।
– আমি খেতে চাই না নিতু।
– ডাইভার চাচা, গাড়ি থামান।
আমি গেট খুলতেই নিতু বলল, শোনো!
এই মুহূর্তটা আমি চিনি। আমি চলে যেতে গেলেই ও বারবার বাঁধা দিবে। যেতে নাহি দিবো টাইপের ব্যাপার।
নিতু ওর আঙুল থেকে আঙটিটা খুলে আমার আঙুলে পড়িয়ে দিয়ে বলল, এটা কোনোদিনও নিজের কাছ থেকে আলাদা হতে দেবে না। মরে গেলেও না।
আমি বুঝে গেছি, আমি আর কথা বলতে পারবো না। আমার গলায় কষ্ট দলা পাকিয়ে আঁটকে আছে। কিছু বলতে গেলেই গলা ভেঙে কান্নার মতো শোনাবে। আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে হাঁটা শুরু করলাম। আমি আর ওর দিকে তাকালামও না। পকেটে নিতুর এক হাজার টাকার ভাংতি। এটা হয়তো এখন ফেরত দেওয়ার উপযুক্ত সময়ও না।
নিতু দৌঁড়ে এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। কিছুক্ষণ চুপচাপ সময় পার হয়ে গেলো। নিতু বলল, আমাকে একবার সামনে থেকে জড়িয়ে ধরো। নইলে আমি মরে যাবো।
চারিদিকের অনেক মানুষ দেখছে। অথচ, ওই যে কিছুক্ষণ আগে আমরা পৃথিবীর একমাত্র মানব-মানবী হয়ে গেছি। আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম। নিতুর বুক দ্রুত স্ফীত হয়ে নেমে যাচ্ছে। ও কী কাঁদছে? আমি শুধু ওর গায়ের পরিচিত গন্ধটা আত্মস্থ করে নিচ্ছিলাম, যাতে চিরকাল এই গন্ধটা আমার হয়ে যায়। হটাৎ করেই ও আমার বুক থেকে নিজেকে আলগা করে উল্টো ঘুরে গাড়িতে গিয়ে বসল। গাড়িটা চলে গেলো। ও আর একবারও আমার দিকে তাকায়নি।

আমার প্রেমের গল্প এভাবে একদিন কান্না হয়ে ঝরে পড়বে তা কোনদিন ভাবিনি । পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ মনে হয় কান্না আঁটকে রাখা। আমি আর পারছিলাম না। আমাকে এক্ষুণি সমুদ্রের কাছে যেতে হবে। কান্নার জল আর সমুদ্রের জলে নাকি কোনো পার্থক্য নেই। আসলে মানুষ তো সমুদ্রেরই সন্তান। সমুদ্রে একটা রক্তকরবী আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সেই রক্তকরবীর নাম নন্দিনী, আমার নিতু। আমি সমুদ্রের পথে রওনা দিলাম।
চোখটা এতো পোড়ায় কেনো
ও পোড়া চোখ সমুদ্রে যাও
সমুদ্র কী তোমার ছেলে
আদর দিয়ে চোখে মাখাও…

কিছু শিক্ষনিয় ও মজার বাসর রাতের গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

আশা করি এই ৩টি মিষ্টি প্রেমের গল্প আপনাদের ভালো লেগেছে । যদি নূন্যতম ভালো লেগে থাকে তাহলে গল্পগুলো শেয়ার করে আমাদের উৎসাহ দেয়ার অনুরোধ রইলো । আর এমন আরো অনেক গল্প, নিবন্ধ ও সংবাদ পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন । ধন্যবাদ।

এই সপ্তাহের সর্বাধিক দেখা ভিডিও:

বাংলাদেশীদের জন্য সেরা অ্যাপ

BD MEDIA MATE APP SCREENSHOT

আমাদের ওয়েবসাইটের জনপ্রিয় পোস্টগুলি:

BEST APP FOR US PEOPLE

US MEDIA MATE APP
Don`t copy text!