Home » cv লেখার নিয়ম (ধাপে ধাপে সম্পূর্ন পক্রিয়া)
নিবন্ধ

cv লেখার নিয়ম (ধাপে ধাপে সম্পূর্ন পক্রিয়া)

সঠিকভাবে একটি আদর্শ cv লেখার নিয়ম বা জীবন বৃত্তান্ত লেখার নিয়ম এবং cv তে কোন কোন তথ্যগুলো যুক্ত করতে হবে, কোনটি উচিত আর কোনটি অনুচিত তা আমরা এখানে আপনাদের জন্য ধাপে ধাপে (স্টেপ বাই স্টেপ) তুলে ধরবো। চাকুরী, শিক্ষাক্ষেত্র সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের cv প্রয়োজন হয় আর একটি নির্ভূল ও আকর্ষনীয় cv আমাদের গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি করে। তাই cv তৈরির আগে, সিভি তৈরির সঠিক নিয়ম দেখে নিন।

cv লেখার নিয়ম (১ম অংশ)

(লেখার সুবিধার জন্য আমি সিভিকে ৩ টি অংশে ভাগ করে উল্লেখ করছি। আপনি ধারাবাহিক ভাবে একটির পর অন্যটি বসাবেন।)

নাম ও ঠিকানা: সিভির প্রথমেই আপনার নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। আপনার সার্টিফিকেট বা জাতীয় পরিচয়পত্রে যেভাবে নাম দিয়েছেন সেভাবেই নাম উল্লেখ করুন। সার্টিফিকেট বা জাতীয় পরিচয়পত্রে যদি ডাক নাম উল্লেখ না থাকে তাহলে ডাক নাম দেয়ার প্রয়োজন নেই। ধরুন আপনার নাম যদি হয় “মো. শফিকুর রহমান নিলয়”, তাহলে “মো. শফিকুর রহমান” লিখুন।

শুধু নাম লিখুন, নামের সাথে মিস্টার, মিস, মিসেস বা এজাতীয় কিছু লাগাবেন না।

যোগাযোগের ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে যেন প্রয়োজনে আপনাকে চিঠি পাঠানো যায়- এমন ভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে ঠিকানা লিখবেন । আর বর্তমানে যেহেতু ইমেইলের ভালো প্রচলন রয়েছে সেহেতু আপনার ইমেইল ঠিকানা দিবেন এবং অবশ্যই ১টি মোবাইল নাম্বার দিবেন। ফোন করলে সবসময় পাওয়া যাবে এমন ১টি মোবাইল নাম্বার দিবেন। একাধিক মোবাইল নাম্বার দিবেন না।

ইমেইল ঠিকানা দেয়ার জন্য আপনার নাম দিয়ে তৈরি একটি ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করবেন। যেমন: arafathosen@yahoo.com । যদি সরাসরি নিজের নামে ইমেইল একাউন্ট খুলতে না পারেন তাহলে প্রয়োজনে সাথে 123 বা এজাতীয় কিছু লাগাতে পারেন। যেমন: arafathosen123@yahoo.com তবে heroboy@yahoo.com বা angelgirl@gmail.com এরকম কোন ফালতু, হাস্যকর ইমেইল কখনোই ব্যবহার করবেন না।

যদি আপনার কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে তবে প্রয়োজনে আপনার ব্যাক্তিগত ওয়েবসাইট, ফেসবুক/টুইটার/লিংকডইন প্রোফাইল লিংক দিতে পারেন তবে প্রয়োজন না থাকলে দেয়ার কোনই দরকার নেই!

আপনি দেশ থেকে বিদেশে কোন প্রতিষ্ঠানে cv পাঠালে প্রয়োজনে স্কাইপ আইডি দিতে পারেন।

ছবি: একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি সিভিতে সংযুক্ত করবেন। ছবির পেছনের দিক এক রংয়ের হওয়া উচিত। একটি ভদ্র ভাবের সাধারন, পরিচ্ছন্ন ছবি সংযুক্ত করবেন। ডানে-বায়ে কাত হয়ে তোলা ছবি, ঘুরতে গিয়ে তোলা ছবি, সানগ্লাস, ক্যাপ, দৃষ্টিকটূ কাপড় ইত্যাদি পরে তোলা ছবি দিবেন না। আপনার সাধারন ভাবে তোলা একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবিই সবচেয়ে উপযোগি।

পেশগত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য: নাম ঠিকানা ও ছবির পরের ধাপে থাকবে পেশাগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এই অংশে আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন সেই পদের সাথে মিল রেখে ২-৩ লাইনের ভিতর সংক্ষিপ্ত ও সুন্দর করে পেশাগত লক্ষ্য উল্লেখ করবেন। অপ্রাসঙ্গিক কোন কথাবার্তা লেখার প্রয়োজন নেই।

সকল ধরনের চাকরিতে একই সিভি বা একই পেশাগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য লিখবেন না। যে পদের জন্য আবেদন করছেন সে পদের সাথে মিল রেখে লিখুন। এটি সিভির একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। তাই সুন্দর পন্থায় cv লেখার নিয়ম মেনে সঠিকভাবে বিষয়টি তুলে ধরুন।

২য় অংশের cv লেখার নিয়ম –

শিক্ষাগত যোগ্যতা: পেশাগত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের পরে উল্লেখ করবেন আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা। শিক্ষাগত যোগ্যতা তুলে ধরার সময় সর্বশেষ যেই ডিগ্রী অর্জন করেছেন সেটি প্রথমে লিখুন। যেমন আপনি যদি মাস্টার্স পাস করে থাকেন তাহলে মেট্রিক> ইন্টার> অনার্স> মাস্টার্স এভাবে না লিখে আগে মাস্টার্স> অনার্স> ইন্টার> মেট্রিক এভাবে লিখুন। কারনে বর্তমানে এই স্টাইলটাই বেশি প্রচলিত।

এই ধাপে আপনার অর্জিত ডিগ্রীর নাম, যে প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছেন তার নাম, বিষয়, পাশের সাল এবং অর্জিত পয়েন্ট উল্লেখ করবেন।

যদি এমন হয়ে থাকে যে আপনি অনার্স বা মাস্টার পরিক্ষা দিয়েছেন কিন্তু ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি তাহলে ফলাফলের ঘরে “Appeared” উল্লেখ করুন। আর যদি পড়ালেখা চলমান থাকে তাহলে “Ongoing” (চলমান) উল্লেখ করুন।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ার সময় যদি আপনার কোন গবেষনা রিপোর্ট প্রকাশ হয়ে থাকে বা যদি আপনার কোন প্রকল্প থেকে থাকে তবে ১-২ লাইনে তা তুলে ধরতে পারেন।

পড়ালেখা সম্পর্কিত নিবন্ধ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

অভিজ্ঞতা: শিক্ষা সম্পর্কিত তথ্যের পরের ধাপে উল্লেখ করবেন অভিজ্ঞতা। আপনার অতীত কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সেটি তুলে ধরুন। কোন প্রতিষ্ঠানে, কোন পদে কতদিনের জন্য কাজ করেছেন তা উল্লেখ করুন।

আর বিষয়টিকে আরো তথ্যবহুল ও আকর্ষনীয় করে তুলতে আপনি শুধু অভিজ্ঞতার কথা না লিখে কর্মক্ষেত্রে আপনার সফলতার বিষয় তুলে ধরুন। কোন প্রকল্প সফলভাবে শেষ করেছেনন কিনা তা লিখুন বা যোগ্যতার বলে দ্রুত নীচের পদ থেকে উপরের পদে পদোন্নতি পেয়ে থাকলে সেটি উল্লেখ করুন।

সদ্য পড়ালেখা শেষ করা শিক্ষার্থীদের বেলায় দেখা যায় যে তাদের চাকরি করার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তবে সরাসরি কোন চাকরি না করে থাকলেও পার্ট টাইম কোন চাকরি করে থাকলে বা কোন প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করে থাকলে সেটি উল্লেখ করতে পারেন। আবার আপনার চাকরির সাথে সম্পর্কিত হতে পারে এমন কোন দায়িত্ব কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সফলতার সাথে সম্পন্ন করে থাকলে সেটি তুলে ধরতে পারেন। তবে যদি তেমন কিছু না থাকে বা উল্লেখ করার মতো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ন না হয় তবে এই অংশটি বাদ দিয়ে পরের অংশে চলে যাবেন।

প্রশিক্ষন বা কর্মশালা: কারিগরি বা অন্য কোন বিষয়ে প্রশিক্ষন নিয়ে থাকলে বা কোন কর্মশালায় অংশগ্রহন করে থাকলে তা উল্লেখ করুন।

কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ ও টাইপিং দক্ষতা: বর্তমানে কম্পিউটার একটি অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। এটি ছাড়া আধুনিক পৃথীবি অচল। তাই পড়ালেখা চলাকালীন সময়েই কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ শিখে রাখুন। সাধারনত টাইপিং, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্টের কাজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় তাই এই ৩ টি কাজ অবশ্যই শিখে রাখতে হবে আর পাশাপাশি সম্ভব হলে আরো কিছু বিষয় শিখে রাখতে পারেন নিজের যোগ্যতা বাড়াতে। কম্পিউটারে যেসব কাজ পারেন সেগুলো উল্লেখ করুন। আপনি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষা টাইপ করতে পারেন কিনা তা উল্লেখ করুন এবং প্রতি মিনিটে গড়ে কতটি শব্দ টাইপ করতে পারেন তা লিখুন।

ভাষা: আমাদের দেশে চাকরি নিতে গেলে বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা জানতে হয়। তাই এই ২টি ভাষা উল্লেখ করুন। এর পাশাপাশি অন্য কোন ভাষা জানা থাকলে সেটিও উল্লেখ করুন।

শখ: নিজের দুই-একটি শখের কথা বা আপনি করতে ভালোবাসেন এমন কোন কাজের কথা লিখতে পারেন। তবে খুবই সংক্ষিপ্ত ভাবে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন লাইনের ভিতরে লিখুন।

cv লেখার নিয়ম (৩য় অংশ)

ব্যক্তিগত তথ্য: এই অংশে আপনার নাম, আপনার জন্ম তারিখ, পিতার নাম, মাতার নাম, আপনি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত, আপনি কোন ধর্মের অনুসারী, আপনার জাতীয়তা কি বা আপনি কোন দেশের নাগরিক তা উল্লেখ করুন।

রেফারেন্স: রেফারেন্স হিসেবে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কোন ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছে এমন কাউকে উল্লেখ করতে পারেন। এক্ষেত্রে সেই ব্যাক্তির নাম, পদবি এবং কোন প্রতিষ্ঠানে তিনি কর্মরত আছেন তা উল্লেখ করবেন। এরপর খুব সংক্ষেপে তার ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিবেন যেন চাইলে তার সাথে যোগাযোগ করা যায়, কারন অনেক সময় চাকরিদাতারা রেফারেন্সে উল্লেখকৃত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে থাকেন।

(উদাহারন-
রেফারেন্স:
মো. আরাফাত হোসাইন
ডেলিভারি অফিসার, ক্রাউন সিমেন্ট লি.
যোগাযোগ: মমতাজ ভিলা, ২৭/৩, মুক্তারপুর। মোবাইল: ০১৫৫৭৩৮৮***)
রেফারেন্স হিসেবে দুইজন ব্যক্তিকে উল্লেখ করলেই চলবে। এর বেশি প্রয়োজন নেই।

রেফারেন্সে যাদের নাম উল্লেখ করবেন তাদেরকে আগেই বিষয়টি জানিয়ে রাখবেন। কারন চাকরিদাতা আপনার সম্পর্কে জানতে প্রয়োজনে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

cv লেখার সময় কিছু লক্ষনীয় বিষয়

সঠিক ভাবে cv লেখার নিয়ম মেনে একটি cv লিখতে গেলে উপরের বিষয়গুলো ছাড়াও আপনাকে আরো কয়েকটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। এই বিষয়গুলোও অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন। দেখে নিন কি কি লক্ষ্য রাখতে হবে।

  • cv তৈরির জন্য A4 সাইজের কাগজ নিন।
  • সাদা কাগজ ব্যবহার করুন। কোন রঙ্গিন কাগজ ব্যবহার করবেন না।
  • লেখার চারিদিকে ১ইন্চি পরিমান জায়গা ফাঁকা রাখুন।
  • নতুন চাকরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে ৫-৬ বছর পর্যন্ত কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্নরা ২ পৃষ্ঠায় cv লিখুন। এর চাইতে বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্নরা প্রয়োজনে আরো ১ পৃষ্ঠা বাড়াতে পারেন। প্রয়োজন না হলে বাড়াবেন না।
  • কোন ধরনের বানান ভূল যেন না থাকে।
  • অপ্রয়োজনীয় কোন কথা লিখবেন না। যথাসম্ভব সুন্দর ও সংক্ষিপ্ত রাখুন।
  • cv কম্পিউটারে টাইপ করে নিন।
  • ছবি সংযুক্ত করলে সিভির শুরুতে বাম পাশে নাম- ঠিকানা এবং এর বরাবর ডান পাশে ছবি দিন।
  • নানা রং ব্যবহার করে সিভি লিখবেন না । সাদা কাগজে কালো অক্ষরে লিখুন। কোন কিছু হাইলাইট করতে চাইলে সামান্য বোল্ড করে দিতে পারেন।
  • শুধু সিভি না পাঠিয়ে সিভির সাথে একটি কভার লেটার দেয়া উত্তম।

ইংরেজিতে সিভি লেখার নিয়ম:

ইংরেজিতে সিভি লেখার নিয়ম বাংলার মতোই। শুধু ভাষাটা পরিবর্তন হবে কিন্তু সবকিছু একই কাঠামোতে থাকবে।

আশা করি উপরিউক্ত পক্রিয়ায় cv লেখার নিয়ম মেনে cv তৈরি করলে আপনার সিভিটি চাকরি দাতাদের নিকট গ্রহনযোগ্য হবে এবং ইন্টারভিউয়ের জন্য আপনার ডাক পড়ার সম্ভবনা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাবে। মনে রাখবেন চাকরি দাতাদের কাছে চাকরির জন্য প্রচুর সিভি জমা হয় তাই একটি সিভি পুরোটা পড়ে দেখার মতো সময় ও অগ্রহ কোনটিই তাদের থাকেনা। তাই মূল অংশগুলোতে চোখ বুলিয়ে তারা আপনার সম্পর্কে ধারনা নিবে। তারপর যদি আপনার cvটি তাদের কাছে আকর্ষনিয় মনে হয় তাহলে তারা হয়তো সিভিটি পড়ে দেখবে। তাই অপ্রয়োজনীয় ও অসত্য কোন কিছু সিভিতে দিবেন না। সিভিটি যথাসম্ভব সহজ সরল ও আকর্ষনিয় করে তৈরি করুন। লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করে উৎসাহ দেয়ার অনুরোধ রইলো। আপনার জন্য শুভকামনা।

এই সপ্তাহের সর্বাধিক দেখা ভিডিও:

বাংলাদেশীদের জন্য সেরা অ্যাপ

BD MEDIA MATE APP SCREENSHOT

আমাদের ওয়েবসাইটের জনপ্রিয় পোস্টগুলি:

BEST APP FOR USA PEOPLE

US MEDIA MATE APP
Don`t copy text!