শুধু কথার কথা নয়, বরং আসলেই নিজের জীবন ও যৌবন বিসর্জন দিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অমানুষিক পরিশ্রম করে দেশে পরিবারের কাছে টাকা পাঠান আমাদের দেশের লাখ লাখ প্রবাসি কর্মী।
তবে প্রবাসিদের কষ্টকে মূল্যায়ন না করে সেই কষ্টার্জিত টাকা বিভিন্ন ফালতু কাজে অপচয় করার দৃশ্য আমাদের সমাজে অহরহ দেখা যায়।
যেসবের কোন প্রয়োজন নেই এবং নিজে যেসবের যোগ্য নন এমন বহু জিনিসের পিছনে টাকা খরচ করেন প্রবাসিদের স্ত্রী, সন্তান, বাবা, মা ও ভাইবোনেরা।
যাদের উচিত ছিলো বহু কষ্টে কামাই করা এসব টাকার যত্ন নেয়া বা রক্ষা করা তারাই উল্টো মেতে উঠেন অপচয়ের খেলায়।
মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান বা বন্ধুদের ফেলে বহু দুরে পরে থাকেন প্রবাসিরা। যেখানে অসুস্থ হলে সেবা করার মতো কেউ নেই, মন চাইলেও হয়তো খেতে পারেননা পছন্দের খাবারটি। বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানকে ছুয়ে দেখতে পারেননা কত বছর। পছন্দের বন্ধুদের সাথে দেখা হয়না কতদিন, আর কখনো দেখা হবে কিনা তাও জানেননা।
এমন আরো কত শত মানসিক কষ্টকে বুকে পাথর চাপা দিয়ে রেখে শারীরিক কষ্টের কাজ করেন তারা একটি ভালো ভবিষ্যৎ এর আশায়। আর এদিকে ভোগ-বিলাস আর অপচয়ে মত্ত তার পরিবার! এমন বিভিন্ন ঘটনা অহরহ চোখে পরে।
এমনও দেখেছি স্বামী হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে দেশে টাকা পাঠান স্ত্রীর কাছে আর স্ত্রী ৩০ হাজার বা ৪০ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোন কিনে ব্যবহার করেন। অথচ দেখা যায় যে একটা বাটন ফোন ব্যবহার করার যোগ্যতাও তার নেই। কিভাবে মোবাইলটি ব্যবহার করতে হবে সেটি জানেননা এমনকি এমনও দেখেছি যে মোবাইলের ডেট চেন্জ করতেও পারেননা, সেটিংস পরিবর্তন করতে পারেননা অথচ ৩০ হাজার টাকা দামের মোবাইল কিনে বসে আছেন।
অনেকে বলেন যে স্বামীর সাথে ভিডিও কলে কথা বলার জন্য স্মার্টফোন কিনেছেন। আরে ভিডিও কলে কথা বলা বা মেসেন্জার, ইমু ব্যবহার করার জন্য ৩০ হাজার টাকার মোবাইল দরকার হয়না, ৫/৬ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোনই যথেস্ট।
আবার এমনও দেখেছি, দাড়ি গোফটাও ঠিকমত গজায়নি বা মাত্র ইন্টারে পড়ালেখা করে, অথচ ২ লাখ বা ৩ লাখ টাকা দামের মোটর সাইকেল কেনার জন্য বাবার কাছে আবদার করে বসে আছে!
কেউ কেউ তো মেট্রিক পাশের আগেই বাবাকে বলে রাখে যে, মেট্রিক পাশ করলে পছন্দের মোটর সাইকেল কিনে দিতে হবে!
কেউ আবার প্রয়োজন ছাড়াই ৫০-৬০ হাজার টাকা দামের ল্যাপটপ ক্রয় করে। অথচ ল্যাপটপ বা কম্পিউটার দিয়ে সে কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনা। তাহলে ল্যাপটপ দিয়ে সে কি করে? গেমস খেলা, সিনেমা দেখা বা অশ্লীল ভিডিও দেখার কাজেই সে ল্যাপটপ ব্যবহার করে। অথচ দেখবেন যে ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট বা টালি ইআরপি এর মত সাধারন সফটওয়্যার ব্যবহার করতেও সে জানেনা। জানেনা কম্পিউটারে একটা যোগ বিয়োগ কিভাবে করতে হয় সেটিও!
এভাবে বহু অপ্রয়োজনীয় পথে প্রবাসিদের পাঠানো টাকা অপচয় হয়ে থাকে। অথচ অপচয় না করে টাকাগুলো যথাযথ সংরক্ষন করলে হয়তো দেশে ফিরে আসার পর একটি ভালো ব্যবসা করার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন পাওয়া যেত বা জমি ক্রয় বা গৃহ নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা হাতে থাকতো।
যাই হোক, সবার প্রতি অনুরোধ প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকাগুলো যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই খরচ করুন, অযথা যেন-তেন ভাবে অপচয় করবেনা না।
Add Comment