বাংলাদেশে যেকোন ইস্যুতে প্রতিবাদ সমাবেশ বা বিক্ষোভ হলে প্রায়ই আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহীনির গুলিতে মানুষের প্রানহানি হয়ে থাকে। আইনশৃংখলা বাহিনীর গুলিতে বিক্ষোভকারি, পথচারী এমনকি শিশুরাও প্রান হারায় নির্বিচারে।
তবে ঘটনা ও পরিস্থিতি বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে অল্প কিছু ক্ষেত্র ছাড়া প্রায় সব ক্ষেত্রেই এসব গুলি বর্ষণ অপ্রয়োজনীয় এবং প্রানহানী ছাড়াই বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব ছিলো।
কিন্তু বাংলাদেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে প্রানহানি ছাড়া বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা না করে বরং তারাও বিক্ষোভকারীদের সাথে পাল্লা দিয়ে আরো বেশি আক্রমনাত্বক আচরন করার মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের পরাস্ত করতে চায়! ভাবটা এমন যে, আমাদের সাথে একবার লেগেই দেখ, তোদের কি অবস্থা করি!
বিভিন্ন উন্নত ও সভ্য দেশের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, সেসব দেশে অনেক বড় বড় বিক্ষোভ বা সহিংস বিক্ষোভও কোন ধরনের প্রানহানি ছাড়াই সফলতার সাথে নিয়ন্ত্রন করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ সমাবেশে আইনশৃংখলা বাহিনীর দ্বারা মানুষের উপর পাল্টা আক্রমন ও প্রানহানি বেশি হওয়ার প্রধান কারনগুলো হলো আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর অধৈর্য, আক্রমনাত্বক মনোভাব, জবাদিহিতার অভাব, সঠিক প্রশিক্ষনের অভাব ও অনুপযোগি অস্ত্রের ব্যবহার।
বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ সমাবেশ নিয়ন্ত্রনে মরানস্ত্র ব্যবহার বন্ধ হোক
বিক্ষোভ সমাবেশ বা প্রতিবাদ মিছিল যেটাই হোকনা কেন, সেগুলো নিয়ন্ত্রনে প্রানঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। মানুষ হত্যা করে ক্ষোভ নিয়ন্ত্রন করা যায়না বরং ক্ষোভ আরো বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘমেয়াদি হয়।
মানুষকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বা পরিস্থিতি অনুযায়ি বিভিন্ন কৌশল কাজে লাগিয়ে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করতে হবে। তবে এটাও সত্য যে বিক্ষুব্ধ জনতাকে বুঝিয়ে শান্ত করা কোন সহজ কাজ নয়। যদি একান্তই প্রয়োজন হয় তবে প্রানঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। টিয়াশ শেল, পিপার স্প্রে, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড, বৈদ্যুতিক শক, রাবার বুলেট বা এধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে যেন মানুষের প্রানহানী না হয়।
গুলি করা হলো একদমই শেষ পর্যায়ের বিষয়। যদি আর কোনই উপায় না থাকে কেবলমাত্র তখনই গুলি করা যেতে পারে। আর গুলি করলেও কেন সরাসরি মানুষের মাথায় বা বুকে গুলি করতে হবে?
নিরুপায় হয়ে যদি গুলি করতেই হয় তবে হাতে বা পায়ে এমনভাবে গুলি করা যায় যেন অল্প চিকিৎসাতেই গুলিবিদ্ধরা সুস্থ হতে পারে। কিন্তু তা না করে সরাসরি মানুষকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয় কেন? এতেই বোঝা যায় যে বিক্ষোভে প্রানহানি হয় পুলিশের স্বেচ্ছাচারিতায় এবং এগুলো ইচ্ছাকৃত খুন! অবশ্য এখানে প্রশিক্ষনেরও অভাব রয়েছে।
কখন কোন পরিস্থিতিতে কোন অস্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে এবং বাধ্য হয়ে গুলি যদি করতেই হয় তবে শরীরের কোন অংশে গুলি করে প্রানহানী এড়ানো যেতে পারে সে বিষয়ে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে প্রশিক্ষন দেয়া যেতে পারে।
বিক্ষোভ, প্রতিবাদ মিছিল বা এধরনের যেকোন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে প্রানঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে প্রানহানী এড়ানোর জন্য।
বিক্ষোভে মানুষ হত্যা করার পর আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী যে অজুহাত দেখায় সেটা হলো “আমরা আত্বরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছি, নয়তো তারা আমাদের মেরে ফেলতো”। এখানে আমার কথা হলো, আপনারা কি ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাস্তায় বের হন যে সামান্য কিছুতেই আপনাদের জীবন ঝুকির মধ্যে পরে যায়?
আমি চাইনা যে আপনারা বিক্ষোভকারিদের হাতে মার খেয়ে যান। আমি চাই আপনারা নিজেরাও নিরাপদে থাকুন, সাধারন জনগনকেও নিরাপদে রাখুন। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামুন যেন আপনাদের জীবনও ঝুঁকিতে না পরে।
আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মানুষ হত্যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে হেট ক্রাইমকে উৎসাহিত করা হচ্ছে
একটি বিক্ষোভ সমাবেশ বা প্রতিবাদ মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলিতে কেউ নিহত হলে সেই নিহত ব্যাক্তির মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, সন্তান, নিকট আত্বীয়, বন্ধু এমনকি এলাকাবাসিরাও আরো বেশি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পুলিশের উপর এদের ক্ষোভ ও ঘৃনা সৃষ্টি হয়।
এলাকাবাসি, বন্ধু ও আত্বীয়রা হয়তো একসময় নিহত লোকটির স্মৃতি ভূলে যাবে কিন্তু তার মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী ও সন্তানরা কখনো তাদের প্রিয়জন হত্যাকারিকে ক্ষমা করবেনা। এরা সারাজীবন পুলিশকে ঘৃনা করে যাবে। এই ঘৃনা যে কতটা ভয়ংকর তা বলে বোঝানো যাবেনা! এমনকি এরা সুযোগ পেলে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে আপনজন হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টাও করতে পারে! এধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার দায়ভার আসলে কার?
দেশের সাধারন জনগনকে হত্যা করে হেট ক্রাইম বা ঘৃনা মূলক সন্ত্রাসকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এসবের ফলে কেউ জংগি বা আত্বঘাতি হামলাকারি হয়ে উঠতে পারে।
তাই আইনশৃংখলা রক্ষাকারী ভাইদের প্রতি অনুরোধ, মানুষের মনে ঘৃনা সৃষ্টি না করে ভালোবাসা সৃষ্টি করুন, শত্রু সৃষ্টি না করে বন্ধু সৃষ্টি করুন।
তবে কি পুলিশ বিক্ষোভকারিদের হাতে মার খেয়ে মরবে?
আগেই বলেছি যে আমি চাইনা আইনশৃংখলা রক্ষাকরি বাহিনীর ভাইয়েরা মারা যাক। কারো মৃত্যুই কাম্য নয়।
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রনের জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, ঢাল সহ অন্যান্য সেফটি ইকুয়েপমেন্ট পর্যাপ্ত পরিমানে দিতে হবে।
অধিক সংখ্যক ফোর্স নিয়ে মাঠে নামতে হবে। কোন সদস্যকে একা কোথায় মোতায়েন করা যাবেনা, দলবদ্ধ ভাবে থাকতে হবে। প্রয়োজনে আশেপাশের থানা থেকে ফোর্স এনে বিক্ষোভ সামাল দিতে হবে।
মূল কথা পুলিশ সদস্য বা বিক্ষোভকারি কারই যেন প্রানহানি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জীবন অমূল্য সম্পদ। কাউকে হত্যা করে কোটি টাকা ক্ষতিপুরন দিলেও এই ক্ষতি পুরন হবেনা।
সুরতাং যেভাবেই কোন প্রানহানি রোধ করতে হবে।
Add Comment