সরিষার তেল রান্নার স্বাদ বাড়াতে যেমন ভূমিকা রাখে তেমনি এর রয়েছে নানা উপকারিতা। সরিষার তেলের উপকারিতা অন্যান্য তেলগুলোর তুলনায় অনেক বেশি এবং এটি সর্বত্র সহজলভ্য। সরিষার তেল ব্যবহারে কি কি উপকারিতা রয়েছে তা জানলে আপনি নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহার করতে চাইবেন। চলুন তাহলে দেখে নেই সরিষার তেলের নানাবিধ উপকারিতা।
স্বাস্থ্যগত দিক থেকে খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা:
ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর: সরিষার তেলে ভিটামিন ই, এন্টি অক্সিডেন্ট, ওমেগা আলফা ৩, ওমেগা আলফা ৬, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিটাক্যারোটিন, ফ্যাটি এসিড সহ বহু ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারি।
কোলেস্টরল মুক্ত: কোলেস্টরল হৃদরোগের অন্যতম কারন। সয়াবিন তেলে সাধারনত কোলেস্টরল থাকে। শরীরে মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টরল হলে হৃদরোগের ঝুকি বৃদ্ধি পায় যা মৃত্যুর কারন পর্যন্ত হতে পারে। সরিষার তেলে কোলেস্টরল নেই। তাই সরিষার তেল দিয়ে রান্না করা খাবার খেলে শরীরে কোলেস্টরল বৃদ্ধির ঝুকি নেই।
খাবারে অরুচি কমায়: সরিষার তেলে পাকস্থলির পাচক রস বৃদ্ধি করে। ফলে মানুষের খাবারে অরুচি কমায় এবং খাবার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
সানস্কিন লোশনের বিকল্প: সরিষার তেলে রয়েছে ভিটামিন ই। এই ভিটামিন ই সূর্যের অতি বেগুনি রশ্নি থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে। এছাড়া সরিষার তেলের ঘনত্ব অনেকটাই বেশি, ফলে বাইরের বাতাস বা সূর্যের আলো সরাসরি ত্বকে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা। পাশাপাশি এটি সম্পূর্ন প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় এর প্বার্শপতিক্রিয়া নেই। তাই ত্বকে সরিষার তেল মালিশ করলে সেটি সানস্কিন লোশনের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তেল মালিশ করে বাইরে বের হলে ধূলাবালি থেকে দুরে থাকতে হবে। নয়তো শরীরে ধূলাবালি জমে গিয়ে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।
রক্ত সন্চালন বৃদ্ধি: সরিষার তেল মালিশ করলে শরীরে রক্ত সন্চালন বৃদ্ধি পায় ও ঘামের গ্রন্থিগুলো কিছুটা উদ্দীপ্ত হয়।
ক্যান্সারজনিত টিউমার সৃষ্টির ঝুকি কমায়: সরিষার তেলে রয়েছে গ্লুকোসিনোলেট নামক একটি উপাদান যা অ্যান্টিকারসিনোজেনিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। এটি ক্যান্সারজনিত টিউমারের গঠন প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ঠান্ডা-কাশি নিরাময়ে সাহায্য করে: সরিষার তেলের ঝাঝালো স্বাদ ও এর ভিতরের উপদানগুলো ঠান্ডা-কাশি নিরাময়ে সাহায্য করে থাকে।
ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন রোধ করে: সরিষার তেলে অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট নামক একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান থাকে যা শরীরে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমন রোধ করতে সহায়তা করে।
ত্বক, চুল ও ঠোটের যত্ন: ত্বকের যত্নে সরিষার তেল ভালো ভূমিকা রাখে। নিয়মিত শরীরে হালকা সরিষার তেল মালিশ করলে তা ত্বককে সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া সরিষার তেল আদ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে তাই শীতকালে শরীরে ও ঠোটে সরিষার তেল মালিশ করলে ত্বক ও ঠোট ফাটা রোধ হয়। চুলের যত্নেও এর ভালো ভূমিকা রয়েছে। প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকায় এটি চুলের যত্নে খুব কার্যকর। চুল পড়া রোধ করা ও চুল কালো রাখতে এটি সাহায্য করে।
কোষ্টকাঠিন্য দুর করে: যাদের কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা খাবারে সরিষার তেল ব্যবহার করলে ভালো ফল পেতে পারেন। সরিষার তেল কোষ্টকাঠিন্য দুর করতে সহায়তা করে।
প্রাকৃতিক এন্টিসেপটিক: সামান্য ছিলে যাওয়া বা অল্প কাটা ছেড়ায় সরিষার তেল এন্টিসেপটিকের কাজ করে থাকে।
এছাড়াও আরো অনেক ক্ষেত্রে সরিষার তেলের উপকারিতা রয়েছে। একসময় আমদের দেশে খাবারের জন্য এবং ত্বকের যত্নে শুধু সরিষার তেলই ব্যবহৃত হতো তবে এখন পাম তেল এবং সয়াবিন তেলের অতি বিস্তারে সরিষার তেলের ব্যবহার অনেকটাই কমে এসেছে অথচ পাম তেল ও সয়াবিন তেলের চাইতে সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক বেশি। নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহার করুন, সুস্থ থাকুন।
Add Comment