কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে সফুরা বেগম ও বিল্লাল হোসেন হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। গত রবিবার রাতে নিজের বাসা থেকে বৃদ্ধা সফুরা বেগম ও তার স্বামী বিল্লাল হোসেনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ঘাতক শিউলি ও তার দুই সহযোগিকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘাতক শিউলি নিহত সফুরা বেগম ও বিল্লাল হোসেনের পুত্রবধু। শিউলির স্বামি আমানুল্লাহ বিদেশে কাজ করেন।
প্রথমে ধারনা করা হয়েছিলো সফুরা বেগম ও বিল্লাল হোসেনকে ডাকাতরা হত্যা করেছে। কারন শিউলি সেভাবেই ঘটনা সাজাতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সত্য চাপা দিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
মূলত শিউলি তার খালাতো ভাইয়ের সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত ছিলেন। স্বামী বিদেশে থাকার সুযোগে শিউলি ছিলো অনেকটাই বাধাহীন ও বেপরোয়া। পরকিয়া প্রেমিকের সাথে মোবাইলে প্রেমালাপ ও বাড়ির বাইরে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করতো সে। আর তার এ অবৈধ কার্যকলাপে প্রধান বাধা ছিলো তার শশুড় ও শাশুড়ি। আর তাই পথের কাটা দুর করতে শশুড় ও শাশুড়িকে হত্যার পরিকল্পান করে শিউলি।
বিভিন্ন বাহানায় পরকিয়া প্রেমিকের সাথে দেখা করে হত্যার পরিকল্পনা সাজায় তারা। এরপর পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন রাত ৯ টার দিকে শিউলির পরকিয়া প্রেমিক শিউলির বাসায় হাজির হয়। ভিতর থেকে তাকে দরজা খুলে ঘরে ঢুকতে দেয় শিউলি। এসময় শিউলির শাশুরি এশার নামাজ পড়ছিলেন।
নামাজ পড়া অবস্থাতেই পেছন থেকে ওড়না দিয়ে শাশুড়ির মুখ ও গলা পেচিয়ে ধরে শিউলি। এরপর তার পরকিয়া প্রেমিক মিলে শাশুড়ির হাত পা বেধে ফেলে। এরপর নিজ হাতেই শাশুড়িকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে শিউলি।
শাশুড়িকে হত্যার পর বাড়ির ভেতরে বসে শশুড়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে তারা। একসময় কাজ শেষে শশুড় ফিরে এলে তাকে দরজা খুলে দেয় শিউলি। শশুড় ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলে দরজা লাগিয়ে দিয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পরে শিউলি ও তার পরকিয়া প্রেমিক। এরপর শশুড়কেও একই কায়দায় হত্যা করে সে।
এরপর ঘটনাটিকে ডাকাতির ঘটনা বলে চালানোর জন্য আলমারি খুলে সবকিছু মেঝেতে ফেলে রাখে তারা এবং ইচ্ছা করে ঘরের জিনিসপত্র ওলট পালট করে। যেন মানুষ দেখলে মনে করে ডাকতরা ঘরের জিনিসপত্র লুট করেছে।
এরপর পরকিয়া প্রেমিককে বলে তাকে বেধে রেখে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে। যেন মানুষ মনে করে ডাকাতরা তাকে বেধে রেখেছে। প্রেমিক তাকে বেধে রেখে ঘর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর সে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করে।
তার চিৎকার শুনে আশেপাশের মানুষজন ছুটে এসে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে এবং কিছু কিছু বিষয়ে সন্দেহ হওয়ায় শিউলিকে আটক করে নিয়ে যায়।
এরপর তদন্ত, প্রতিবেশিদের দেতা তথ্য ও বিভিন্ন আলামত পরিক্ষা নিরীক্ষা করে পুলিশের সন্দেহ আরো জোড়ালো হয় এবং শিউলিকে জেরা করা শুরু করে। শেষ পর্যন্ত শিউলি হত্যার কথা স্বীকার করে এবং নিজের প্রেমিকের তথ্যও পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ তার পরকিয়া প্রেমিককেও খুজে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো: ফারুক আহমেদ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
Add Comment