পুরো দেশের শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব যাদের উপর তারা নিজেরাই যদি শৃংখলা ভংগ করেন তবে তার জন্য কঠিন শাস্তি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। আর ঠিক এমনটাই ঘটেছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে।
পুলিশ বাহিনী একটি সুশৃংখল বাহিনী, যার সবকিছুই পরিচালিত হয় সুনির্ধারিত নিয়মের আওতায়। পুলিশ বাহিনীতে যারা চাকরি করেন তারা নিয়ম নীতি ও চেইন অব কমান্ড মেনে চলার প্রতিজ্ঞা করেই চাকরিতে যোগ দেন। তবে অনেকেই পরে সে প্রতীজ্ঞা ভুলে যান।
নিয়ম-নীতি ও আদেশের তোয়াক্কা না করেই ইদের দিন প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে বেরিয়া যাওয়া ও রোলকলে অনুপস্থিত থাকার কারনে ২১২ জন সাব ইন্সপেক্টরের সম্পূর্ন ডিসি কোর্স বাতিল করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
এর ফলে এখন তারা আর স্থায়ি ভাবে এস আই পদে প্রমোশন পাবেননা।
যারা শাস্তি পেয়েছেন তারা সবাই ১৪-১৫ বছর যাবত চাকরী করছেন। ডিসি কোর্স পাস করতে পারলে তারা এস আই পদে স্থায়ি প্রোমশন পেতেন। কিন্তু কোর্স কমপ্লিট হওয়ার মাত্র ১৫ দিন আগে তাদের কোর্স বাতিল করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে যে প্রশিক্ষনের নিয়ম ভঙ্গ করে এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই গত মে মাসে ইদের সময় ডিসি কোর্সে প্রশিক্ষনাধীন ২১২ জন এস আই নিজেদের ইচ্ছেমতো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে যান!
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিকে (এইচআরএম) পাঠানো পুলিশের ডিআইজি ও পিটিসির কমান্ড্যান্ট ময়নুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৬৭ জন প্রশিক্ষনার্থীর মধ্যে ১৩ মে রাত ৮টার রোলকলের পর থেকে ১৫ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৪৯ জন, বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ৬১ জন এবং রাত ৮টা পর্যন্ত দুজনসহ ২১২ জন প্রশিক্ষণার্থী অনুপস্থিত ছিলেন।
সুশৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীর দায়িত্বশীল সদস্য হয়েও তারা মৌলিক প্রশিক্ষণ চলাকালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা এবং প্রশিক্ষণের সঠিক নিয়ম না মেনে পিটিসি ত্যাগ করে বিভাগীয় রুলস ভঙ্গ ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করেছেন।
এ বিষয়ে পিটিসি তাদের প্রত্যেককে কৈফিয়ত তলব করে। তাদের দাখিল করা জবাব সন্তোষজনক নয়।
তবে শাস্তি পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। শৃখংলা ভংগের বিষয়টিকে “সামান্য ভূল” উল্লেখ করে তারা বলেন, এই সামান্য বিষয়ে আমাদের এত বড় শাস্তি দেয়া হবে তা ভাবতে পারিনি।
বর্তমানে তারা তাদের শাস্তি মওকুফ করানোর জন্য সরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলেছেন কিন্তু তবুও তাদের শাস্তি এখনও মাফ করা হয়নি।
তবে নিজেরা নিজেদের ভূলকে সামান্য বললেও পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি কোন সামান্য বিষয় নয়। একটি বাহিনীতে সব কিছু নিয়ম অনুযায়ি পরিচালিত হয়। যেদিন মন চাইবে সেদিন প্রশিক্ষন করবো আর যেদিন মন চাইবেনা সেদিন আদেশ অমান্য করে চলে যাবো- এটা হতে পারেনা। আজকে তারা শাস্তি হবে যেনেও একাজ করেছে, এখন যদি তাদের শাস্তি দেয়া না হয় তবে তারা ভবিষ্যৎতে আরো অনিয়ম করতে উৎসাহিত হবে।
আর যারা নিয়ম ভংগ করছে তাদের যদি শাস্তি দেয়া না হয় তবে যারা নিয়ম মেনে ইদের রাতেও রোল কলে উপস্থিত ছিলো তাদের প্রতি অবিচার করা হবে।
Add Comment